Umar Khalid

সুবিচারের আশায় গণতন্ত্রের বিবেকেই আস্থা উমরের বন্ধুদের

চার বছর ধরে ইউএপিএ আইনে কার্যত বিনা বিচারে বন্দি ইতিহাসের মেধাবী গবেষক উমর খালিদ। তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র ‘কয়েদি নম্বর ৬২৬৭১০’ দেখতে রবিবার সন্ধ্যায় আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদীরাও অনেকে জড়ো হয়েছিলেন।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩৮
Share:

উমর খালিদ। ছবি: সমাজমাধ্যম।

সুবিচারের খোঁজে প্রশাসন, বিচারব্যবস্থাকে দায়বদ্ধ রাখতে নাগাড়ে প্রতিবাদই রাস্তা বলে সওয়াল করলেন উমর খালিদের বন্ধুরাও। চার বছর ধরে ইউএপিএ আইনে কার্যত বিনা বিচারে বন্দি ইতিহাসের মেধাবী গবেষক উমর খালিদ। তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র ‘কয়েদি নম্বর ৬২৬৭১০’ দেখতে রবিবার সন্ধ্যায় আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদীরাও অনেকে জড়ো হয়েছিলেন। সুজাতা সদনের অনুষ্ঠানে খানিকটা তাঁদের উদ্দেশেই উমরের বন্ধু, সহযোদ্ধা, জওহরাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী বনজ্যোৎস্না লাহিড়ী বলছিলেন, ‘‘রাস্তাকে নীরব হতে দেওয়া যায় না। প্রতিবাদী জনতার বিবেক, মূল্যবোধ সরকার বা সর্বোচ্চ আদালতকেও প্রভাবিত করে।’’

Advertisement

সাম্প্রতিক অতীতের ভাঁড়ার থেকে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিপাকে ফেলা কৃষক আন্দোলন কিংবা নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের কথাও মনে করালেন তাঁরা। উমরের আর এক সহযোদ্ধা, জেএনইউ-এর বন্ধু অনির্বাণ ভট্টাচার্যও বললেন, ‘‘এখন সংসদে বিরোধী-শিবিরের রাজনীতিবিদদের সংবিধানের মূল্যবোধ মেলে ধরতে দেখলেও শাহিনবাগকে মনে পড়ে।’’ সেই আন্দোলন দীর্ঘ দিন নাগরিকত্ব আইন রুখে দিয়েছিল। এর আগে দীর্ঘদিন সংবিধানের প্রতীকী মর্যাদা কেউ মনে করায়নি। দেশের যে কোনও গণআন্দোলনে ইদানীং জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত বা সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রয়োগ দেখেও অনেকেরই এখন উমর খালিদদের মতাদর্শের উত্তরাধিকারও মনে পড়ে যায়। পিপল’স ফিল্ম কালেক্টিভের অনুষ্ঠানে উমরকে নিয়ে ছবিটি দেখানোর পরে অনির্বাণ, বনজ্যোৎস্নারা উমরের অন্য সহযোদ্ধা শরজিল ইমাম, গুলফিসা ফাতিমা, মিরান হায়দর, শিফা-উর-রহমান, খালিদ সৈফি, মহম্মদ সালিম খানদের ‘কালা কানুনে’ (ইউএপিএ) বন্দি থাকার কথা নিয়েও আলোচনা করছিলেন। উমরকে নিয়ে ললিত ভাচানির তৈরি ছবিটিও মনে করাচ্ছে, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে খেসারত দেওয়া এই নামগুলি সকলেই মুসলিম।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আট বছরে আগে জেএনইউ-এর ছাত্র উমর সরস ভঙ্গিতে পথসভায় বলছেন, ‘‘আমার নাম উমর খালিদ, কিন্তু আমি জঙ্গি নই। আমি তো নিজের মুসলিমত্ব নিয়ে আলাদা করে ভাবতামই না। কিন্তু মুসলিম পরিচয়টাই আমার গায়ে সেঁটে দেওয়া হল।’’ ২০১৯-এর নাগরিকত্ব আন্দোলনের বিভিন্ন ‘মুখ’কে দেশদ্রোহী প্রতিপন্ন করা হলেও ছবিতে ২০১৯-২০র বক্তৃতা সভায় উমর বলছেন, ‘‘আমি গর্বিত ভারতীয় মুসলিম। ঘটনাচক্রে নয়, স্বেচ্ছায়। জিন্না নয়, আমার নেতার নাম গান্ধী, আজ়াদ, অম্বেডকর।’’ ছবি শেষে কস্তুরী বসুর সঙ্গে আলাপচারিতায় অনির্বাণ বললেন, ‘‘দশ বছরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘেন্নার বিষ যে ভাবে ছড়ানো হয়েছে উমরের মতো রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য মুসলিম পরিচয়টাও একটা বাধা।’’

Advertisement

তবে উমরের বন্ধু, সঙ্গী বনজ্যোৎস্না দেশের মানুষ এবং বিচারব্যবস্থা— দুয়েতেই আস্থা রাখছেন। তিনি বলছেন, ‘‘উমরকে নিয়ে ছবিটা দেশের বিভিন্ন শহরে ৪৫ বার দেখানো হয়েছে। বার বার নতুন লোক দেখছেন। উমরদের পাশে অনেকেই আছেন, বুঝতে পারছি!’’ আর বিচারব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, ‘‘আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী! তাই বিচারব্যবস্থাকেই তো বিশ্বাস করব! উমরদের কয়েক জন সহযোদ্ধা নাতাশা, আসিফ, দেবাঙ্গনাদের জামিন দেওয়ার সময়ে বিচারক বলেছিলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীকে জঙ্গি বলা যায় না। এটা তো খুবই সদর্থক। আবার উমরের জামিনের বিরোধিতার সময়ে আদালত ওর বক্তৃতায় ‘ইনক্লাব জ়িন্দাবাদ’ কথাটার মধ্যেও ‘লোক খেপানো’র চিহ্ন দেখে। এটাও ঘটেছে।" উমরকে আইনের গেরোয় ফাঁসাতে বিজেপি এবং এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে পুলিশের অদ্ভুত বাস্তুতন্ত্র কাজ করেছিল বলেও দেখছেন বনজ্যোৎস্নারা। উমরের বক্তৃতার কয়েক সেকেন্ড তুলে ধরে 'অপপ্রচার' হয়। উমরকে নিয়ে ছবিটিতে মহারাষ্ট্রের সেই তথাকথিত বিতর্কিত বক্তৃতাটি দেখানো হয়েছে। তাতে উমর গান্ধীর পথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথাই বলছেন।

ছবিতে উমরের সহযোদ্ধারা বলেছেন, জেলে ইতিমধ্যে গোগ্রাসে ২০০টির বেশি বই পড়ে ফেলেছেন উমর। কবে ছাড়া পাবেন তাঁরা উত্তর নেই। তবু এই কঠিন সময়েও সুরসিক উমরের সঙ্গে জেলে সাপ্তাহিক মোলাকাতে উজ্জীবিত বোধ করেন সহযোদ্ধারা। শুধু উমরের জন্য নয়, দেশে গণতন্ত্র বাঁচাতেই উপনিবেশ যুগের ইউএপিএ-র বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার তাগিদ মনে করান বনজ্যোৎস্নারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement