আধার বাতিল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আচমকাই বাতিল আধার কার্ড! এক-দু’জন নন, রাজ্যের অন্তত ৬০ জনের কার্ড বাতিল করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, যাতে ভোট দিতে না পারে, সেই কারণে অনেকের আধার বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। তার পরেই আধার বাতিলের খবর প্রকাশ্যে আসায় এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করতে শুরু করেছে তৃণমূল। পাল্টা জবাব দিয়েছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, জামালপুর ব্লকের জুহিহাটি, জৌগ্রাম, আবুজহাটি এলাকার অন্তত ৬০ জনের কাছে ডাকযোগে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে যে, তাঁদের আধার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। ‘ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ (ইউআইডিএআই)-এর রাঁচীর আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে তাঁরা সেই চিঠি পেয়েছেন। জুহিহাটির বাসিন্দা প্রিয়া সরকারের আধার বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কেন এ ভাবে আধার বাতিল করে দেওয়া হল বুঝতে পারছি না।’’ আধার বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পুতুল সরকারও। তিনি বলেন, ‘‘এর জন্য আমরা রেশন তুলতে পারছি না। ব্যাঙ্কের লেনদেন করা যাচ্ছে না।’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, চিঠিতে বলা হয়েছে আধার নিষ্ক্রিয় করা নিয়ে অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইউআইডিএআই-এর আঞ্চলিক দফতর কিংবা আধারের ওয়েবসাইটে তা জানাতে হবে।
আধার দফতর থেকে পাঠানো সেই চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।
হঠাৎ আধার বাতিল হওয়া নিয়ে আঁধারে ব্লক প্রশাসনও। জামালপুর ব্লকের বিডিও পার্থসারথি দে বলেন, ‘‘ঘটনাটি জানার পর এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বিশদে কিছু জানতে পারিনি। আধারের টোল ফ্রি নম্বর ১৯৪৭-এ ফোন করেছিলাম। কিন্তু কিছুই জানা যায়নি।’’
এ নিয়ে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলেছে শাসকদল তৃণমূল। দলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার আধার কার্ড নিয়ে ছেলেখেলা করছে। যেন তুঘলকি নিয়ম চলছে! একবার বলা হচ্ছে, আধার-ই হল নাগরিকদের একমাত্র পরিচয়পত্র। আবার কখনও বলা হচ্ছে, আধার না হলেও চলবে। সাধারণ মানুষকে হয়রান করা হচ্ছে।’’ পাল্টা জেলা বিজেপির যুবমোর্চার সাধারণ সম্পাদক দেবজ্যোতি সিংহ রায় বলেন, ‘‘হয়তো ওঁদের কাগজপত্রে কিছু ভুল থাকতে পারে। তার জন্য আধার নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।’’
গত কয়েক দিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে আধার বাতিলের খবর এসেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা সম্প্রতি ফের দেশে নাগরিকত্ব আইন রূপায়ণের বার্তা দেওয়ায় গোটা বিষয়টি ঘিরে আরও সংশয় দানা বেঁধেছে। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা অভিযোগ করেছেন, ‘‘কত টাকা দিয়ে ঘুরে ঘুরে আধার কার্ড করেছে মানুষ। ইলেকশনের আগেই শুনলাম, চা বাগানের অনেকের কার্ড বাতিল করা হয়েছে। শুনেছি, আধার কার্ড নাকি বাতিল করে দিতে বলেছে, যাতে মানুষ ভোট দিতে না পারে।’’ আধার নিয়ে শাসক-বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, পাল্টা বক্তব্যের জেরেই সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।
২০১৭ সালেও দেশ জুড়ে অন্তত ৮১ লক্ষ মানুষের আধার বাতিলের খবর প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই সময় কেন্দ্র জানিয়েছিল, সঠিক তথ্য না থাকার কারণেই আধার বাতিল করা হয়েছে। আধার কার্ড বাতিল বা নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা রয়েছে ইউআইডিএআই-এর হাতে। আধার কার্ড রেগুলেশনের ২৭ এবং ২৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনও ভাবে একই ব্যক্তির নামে দু’টি পৃথক আধার কার্ড জারি করা হলে বা তাতে কোনও গন্ডগোল থাকলে, কার্ড বাতিল বা নিষ্ক্রিয় করা যেতে পারে। তা ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা বায়োমেট্রিক তথ্যে ভুল থাকলেও আধার নিষ্ক্রিয় করা হয়ে থাকে। নিয়মানুসারে, পাঁচ বছরের কম বয়সি কোনও শিশুর নামে আধার কার্ড থাকলে, পাঁচ বছর বয়সের পরে তার বায়োমেট্রিক্স তথ্য আপডেট করতে হবে। ফের ১৫ বছর বয়স হওয়ার পর আবার ওই তথ্য পুনরায় দিতে হবে। এই তথ্য আপডেটের জন্য দু’বছরের সময়সীমা দেওয়া হয়। এই দু’বছরের মধ্যে আপডেট না হলেও আধার কার্ডটি বাতিল করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কী কারণে আধার কার্ড বাতিল করা হল, তা স্পষ্ট নয় বলেই জানাচ্ছেন জামালপুরের বাসিন্দারা।