মর্মান্তিক: রামরাজাতলা স্টেশনের কাছে এই জায়গাতেই সোমবার ঘটে দুর্ঘটনা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
লাইন পারাপার নিয়ে স্টেশনে রেলের ঘোষণাই সার। নিরাপত্তা নিয়ে যাত্রীদের অনেকেই যে এখনও সচেতন নন, সোমবার দু’টি মৃত্যুর ঘটনায় তা ফের প্রমাণ হল। রেললাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল দুই যুবকের।
এ দিন দুপুরে ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের রামরাজাতলা স্টেশনের কাছে। রাত পর্যন্ত মৃতদের পরিচয় জানতে পারেনি রেলপুলিশ। দেহ দু’টি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
রেলপুলিশ জানায়, আপ পাঁশকুড়া লোকাল সোমবার দুপুর দেড়টা নাগাদ রামরাজাতলা স্টেশন ছেড়ে চার নম্বর লাইন দিয়ে সাঁতরাগাছি স্টেশনের দিকে রওনা দিয়েছিল। ট্রেনটি যখন গতি নিচ্ছে তখন আচমকা দুই যুবক রেললাইনের উপরে চলে আসেন। চালক ব্রেক কষার সময় পাননি। ট্রেনের ধাক্কায় দু’যুবকের এক জনের মাথা সম্পূর্ণ থেঁতলে যায়। অন্য জনের ডান পা কেটে উড়ে গিয়ে পড়ে ২০ ফুট দূরে। রামরাজাতলা স্টেশন থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে এই দুর্ঘটনার পরে দেহগুলি পড়ে রয়েছে দেখতে পেয়ে এলাকার লোকজন ছুটে আসেন। আসেন রেলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা। তাঁরাই দেহ তুলে শালিমার রেলপুলিশ থানায় পাঠান।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘ওই দুই ব্যক্তি রেল লাইন পেরোতে গিয়ে বেআইনি কাজ করেছেন। আমরা বারবার মানুষকে সচেতন করার পরও সামান্য সময় বাঁচাতে মানুষ জীবন বিপন্ন করছেন।’’
রেল আধিকারিকেরা জানান, রামরাজাতলা স্টেশনে লেভেল ক্রসিং, ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে। তা ছাড়া রয়েছে স্টেশন থেকে বেরিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার পাকা রাস্তাও। কিন্তু শুধুমাত্র রাস্তা কম হবে বলে রেললাইন ধরে হাঁটার সময়ে ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল দুই যুবকের।
স্থানীয়েরা জানান, দক্ষিণ-পূর্ব রেলে হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় ৪ নম্বর লাইন হওয়ার সময়ে একাধিক ঝিল বা নিচু জমি ভরাট করতে হয়। রামরাজাতলা স্টেশনের পাশ দিয়ে ওই লাইন বসানোর সময়ে রেলের জমিতে গড়ে ওঠা নারায়ণপল্লি নামে স্থানীয় একটি কলোনির সামনের রাস্তাও অনেকটা চওড়া হয়ে যায়। এলাকার বাসিন্দা মাধুরী রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই চওড়া রাস্তাটি ব্যবহার করে কলেজ পড়ুয়া থেকে রেলযাত্রী অনেকেই রেললাইন পেরোন। বারণ করলেও লাভ হয়নি। কিন্তু কলোনির লোকেরা স্টেশন থেকে আসার সময়ে রেল লাইনের উপর দিয়ে হেঁটে আসেন না। আমরা বাজার দিয়ে ঘুরে পাকা রাস্তা দিয়েই আসি।’’
স্টেশন থেকে বেরিয়ে রাস্তা কম হবে বলে যাত্রীরা যে ৪ নম্বর লাইন ব্যবহার করেন, তা মানছেন স্টেশনের দায়িত্বে থাকা আরপিএফ জওয়ান এ কে সাহু। তিনি বলেন, ‘‘রাস্তাটা বেড়়া দিয়ে ঘিরে দেওয়ার জন্য জানাব।’’