Crime

রাতভর গণধর্ষণ, রাজগঞ্জে লজ্জায় আত্মঘাতী কিশোরী

এ দিন পকসো আইনে মামলা রুজু করে ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৩৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

দিনমজুরের মেয়ে। এক জনের বয়স ১৫ বছর, অন্য জনের ১৩। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে পাশাপাশি বেড়া দরমার ঘরে থাকত দুই জ্যেঠতুতো-খুড়তুতো বোন। অভিযোগ, গত শুক্রবার রাতে দু’জনে দোকানের যাওয়ার জন্য বার হলে কয়েক জন মিলে তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে রাতভর গণধর্ষণ করে। পরদিন, শনিবার তারা ফাঁক পেয়ে পালিয়ে বাড়ি এসে কীটনাশক নিয়ে আবার বার হয়ে যায়। সেই রাতে দুই বোন বাড়ি ফেরেনি। ছোট বোনের কথায়, রবিবার তারা বাড়ি ফিরে এলেও লজ্জায়, অপমানে দু’জনেই কীটনাশক খায়। মুমূর্ষু অবস্থায় দু’জনকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করান বাড়ির লোকেরা। কিন্তু সোমবার বড় বোন মারা যায়।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে ছোট জনের অবস্থা কিছুটা ভাল হওয়ায় তার কাছ থেকে ঘটনার পুরো বিবরণ জানতে পারে পরিবার। সেই মতো গ্রামেরই পাঁচ যুবক ও এক কিশোরের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার ভিত্তিতে পুলিশ ওই নাবালক-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। এ দিন পকসো আইনে মামলা রুজু করে ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিজেপির রাজ্য কর্মসমিতিতে আনা হল শোভনকে

Advertisement

জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্দীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘বাকি অভিযুক্তরাও দ্রুত ধরা পড়বে বলে আশা করছি আমরা।” জানা গিয়েছে, পুলিশ পকসো ছাড়াও ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী অপহরণ, গণধর্ষণ, আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।

আরও পড়ুন: সুস্থতাকে ছাপিয়ে ফের বাড়ল দৈনিক সংক্রমণ, এক দিনে মৃত ৫৭

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভাবী পরিবারের সন্তান বলে মাঝপথে পড়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ওই দু’টি মেয়ের। পরিবারের দাবি, গত শুক্রবার রাতে দুই বোন বিস্কুট কিনতে বাড়ি থেকে বার হয়েছিল। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে দোকান। সে রাস্তা সাধারণত অন্ধকারেই ডুবে থাকে। ফেরার পথে তাদের পথ আগলে দাঁড়ায় গ্রামেরই কয়েক জন। অভিযুক্তরা সকলেই দিনমজুরের কাজ করে বলে পুলিশের দাবি।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে সঙ্কটজনক অবস্থায় শুয়ে থাকা ছোট বোনের বক্তব্য ভিডিয়োয় তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা। সেই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, কাঁদতে কাঁদতে ওই নাবালিকা বলছে, “রাস্তা থেকে আমাদের জোর করে তুলে নিয়ে যায় কয়েক জন (অভিযুক্তদের নামও ভিডিয়োতে বলেছে নাবালিকা)। আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। জোর করে যৌন অত্যাচার চালাতে থাকে। আমার দিদিকে জোর করে বাগানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। আমি তো আমাকে বাঁচাতে পারি, কিন্তু দিদিকে বাঁচাতে পারিনি। সকলের শাস্তি চাই।’’

মেয়েটি তখনও জানে না, তার দিদি মারা গিয়েছে। তাই এক সময়ে বলেও ফেলে, ‘‘দিদি হয়তো এই দুনিয়াতে আর নেই।”

কেন তারা বাড়ি ফিরেও কীটনাশক নিয়ে বার হয়ে যায়, তা নিয়ে পড়শি ও পরিবারের কারও কারও দাবি, লজ্জায় মুখ দেখাবে না বলেই হয়তো বাড়িতে থাকেনি। ছোট মেয়েটি সঙ্গে জামাকাপড় নিয়ে গিয়েছিল বলেও সূত্রের খবর। পড়শিদের দাবি, হয়তো লজ্জায় পালিয়ে যাবে ভেবেছিল। যখন বাড়ি ফিরল, তখনও বোঝা যায়নি, তারা কেউ কীটনাশক খেয়েছে। মৃত মেয়েটির আত্মীয়রা এখনও আক্ষেপ করছেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে কথা বললে মরতে হত না ওকে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement