লঙ্ঘন: হেমতাবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠানে এ ভাবেই মঞ্চে উঠে পড়েছিলেন রাবেয়া। ফাইল চিত্র।
দুই বোনই স্কুল ছেড়েছেন অনেকদিন। তারপরেও বৃহস্পতিবার হেমতাবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় স্কুলের পোশাক পরেই এসেছিলেন উত্তর দিনাজপুরের রাবেয়া ও আসনুরা খাতুন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বসার জায়গা মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চের কাছাকাছি হওয়ায় রাবেয়া ও আসনুরা স্কুলের পোশাক পরে সেখানেই ঢুকে পড়েন। বসেওছিলেন এমন জায়গায় যাতে বাঁশের ফাঁক গলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে দৌড়ে মঞ্চে উঠে পড়তে পারেন। সামনে বড় বড় সাউন্ড বক্সের আড়ালও ছিল। পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই এগিয়েছিলেন দুই বোন।
তাতেই দুই বোনকে নিয়ে অস্বস্তি কাটছে না প্রশাসনের।
পুলিশ জানাচ্ছে, রাবেয়া ও আসনুরার দাবি, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে চেয়ে তাঁর মালদহ ও গঙ্গারামপুরের সভাতেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ ওই দুই সভার সিসিটিভি ফুটেজ তন্নতন্ন করে খুঁটিয়ে দেখেও দু’জনকে সেখানে দেখতে পায়নি। দুই বোনের মোবাইল থেকেও সে রকম কোনও তথ্য মেলেনি। এমন নানা অসঙ্গতির কারণেই রাবেয়া, আসনুরাকে নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছে না প্রশাসন। তাঁদের অবশ্য গ্রেফতার করা হয়নি। দু’জনেই রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি। সেখানেই তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বারবার বয়ানও বদলেছেন দুই বোন। একবার তাঁরা বলেছেন, চাকরির দাবি করতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। আবার দাবি করেছেন, প্রতিবন্ধী মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার অনুরোধ করতে চেয়েছিলেন। আবার বলেছেন, তিন বছর আগে তাঁদের বাবাকে খুনে দোষীদের শাস্তির আর্জি জানানোর চেষ্টা করেছিলেন।
দু’জনকেই উত্তর দিনাজপুরের প্রশাসনিক কর্তারা বেশ ভাল চেনেন। জেলাশাসক আয়েশা রানি বলেছেন, ‘‘রাবেয়া ও আসনুরা বহু বার আমার ও পুলিশ সুপারের কাছে গিয়েছেন। তাঁদের গীতাঞ্জলি আবাস যোজনায় ঘর দেওয়া হয়েছে। রাবেয়াকে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চাকরি দেওয়াও হয়েছে।’’ তারপরেও কেন তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে চেয়েছিলেন, তা-ও তাই স্পষ্ট নয়। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহের বক্তব্য, ‘‘দুই তরুণীর আসল উদ্দেশ্য কী ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
তবে রাবেয়ারা এই ঘটনায় অনুতপ্ত নন। এ দিন রাবেয়া জানান, তাঁরা নয় বোন ও তিন ভাই। ভাইবোনেরা বিড়ি শ্রমিকের কাজ করে। তাঁর কথায়, ‘‘আসনুরার একটা চাকরি ও আমার বাবার খুনিদের ফাঁসি চাইতেই দিদির কাছে গিয়েছিলাম। আমরা অনুতপ্ত নই।’’
পুলিশ জানিয়েছে, দু’জনেই অসুস্থ, তাই হাসপাতালে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। যদিও রাবেয়া ও আসনুরার দাবি, ‘‘আমরা বাড়ি যেতে চাই। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছুটি পাচ্ছি না।’’