শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ নিলয় মালিক এবং বিশ্বরূপ প্রামাণিককে রিসর্টে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
বলাগড়ের রিসর্টে বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ আরও দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। শনিবার সকাল থেকে ওই রিসর্টে সুপ্রতিম ঘোষ ওরফে আকাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খাতায়কলমে তিনিই রিসর্টটির মালিক। অভিযোগ, তিনি শান্তনুর ছায়াসঙ্গী। তাঁর নামে রিসর্ট কিনেছেন শান্তনু।
শনিবার বেলার দিকে শান্তনু-ঘনিষ্ঠ নিলয় মালিক এবং বিশ্বরূপ প্রামাণিককে ডেকে পাঠান ইডির তদন্তকারীরা। রিসর্টেই তাঁদের শান্তনুর সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়। ইডি সূত্রের খবর, শান্তনু এক সময় নিলয়ের নামে একটি গাড়ি কিনেছিলেন। তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট হৃদ্যতা ছিল। শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার প্রোমোটিংয়ের ব্যবসায় অন্যতম অংশিদারও এই নিলয়।
যদিও ইডির জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিসর্ট থেকে বেরোনোর সময় নিলয় দাবি করেছেন, শান্তনুর সঙ্গে অতীতে তাঁর সুসম্পর্ক থাকলেও গত দেড় বছর ধরে তিক্ততা তৈরি হয়েছে। কারণ শান্তনুর নিজের একটি ধাবা রয়েছে। নিলয়ও একটি ধাবা খুলেছেন। এই ধাবাকে কেন্দ্র করে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে দাবি নিলয়ের।
আর এক শান্তনু-ঘনিষ্ঠ বিশ্বরূপও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন। নিলয়কে কিছু ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে আবার তাঁকে ডেকে নেওয়া হয়। পাশাপাশি বিশ্বরূপ এবং আকাশকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে ইডি। বিশ্বরূপের নামেও শান্তনুর একাধিক সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার।
আকাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রিসর্টের সিসিটিভি ফুটেজের সন্ধান পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এলাকার একটি বাড়িতে আকাশকে নিয়ে গিয়ে তাঁরা ব্যাগ ভর্তি করে হার্ডডিস্ক নিয়ে এসেছেন। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে বলাগড়ের চাঁদড়া বটতলা এলাকার এই রিসর্ট সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া, রিসর্টে মিলেছে একাধিক নথিপত্রও, যা ইডির তদন্তে কাজে লাগতে পারে। তদন্তকারীরা রিসর্টে প্রিন্টার নিয়ে এসেছেন বলে খবর।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে শান্তনুর নাম জড়ানোর পর থেকেই, নামে-বেনামে তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর একাধিক সম্পত্তির হদিস মিলেছে। ইডির দাবি, একাধিক বাড়ি, রেস্তরাঁ, বিলাসবহুল বাগানবাড়ির মালিক এই শান্তনু। শুক্রবার শান্তনুর পাশাপাশি, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্তত ২০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করা হয়েছে। ইডি সূত্রে খবর, নজরে থাকা অ্যাকাউন্টগুলিতে সব মিলিয়ে ১ কোটি টাকারও বেশি গচ্ছিত রয়েছে। সেই টাকা কোথা থেকে এল, কোথায় গেল, কবে গেল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তার মাঝেই বলাগড়ের রিসর্টে ইডির প্রশ্নাবলির মুখে বহিষ্কৃত যুব তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠেরা।
বলাগড়ের রিসর্টে শনিবার সকাল ১০টা ৫ মিনিট নাগাদ ঢুকেছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট নাগাদ তাঁরা বেরিয়ে যান। সেই সঙ্গে ফিরে যান নিলয়, বিশ্বরূপ এবং আকাশও।