বাসন্তী কিস্কু। নিজস্ব চিত্র
ডাইনি অপবাদে মার জুটেছে। সপরিবারে ভিটে ছাড়া হতে হয়েছে। তাতেও হাল ছাড়েনি আদিবাসী মেয়েটি। লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছেটাই তাকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্য এনে দিয়েছে। সামাজিক, আর্থিক সবরকম প্রতিকূলতার মধ্যে এই সাফল্যের মুকুট তাকে পরিচিতিও দিয়েছে।
বোলপুরের বিনুড়িয়া সুমিত্রা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী বাসন্তী কিস্কুর জীবন সংগ্রাম ও উচ্চমাধ্যমিকে সাফল্যের পাশাপাশি তার উচ্চ শিক্ষার আগ্রহের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পরে কলকাতা থেকে বিনোদপুরে বাসন্তীর বাড়িতে গিয়েছিলেন রনধীশ চৌধুরী ও শিশির কর। দুজনেরই যথেষ্ট বয়স হয়েছে। কিন্তু খবরের কাগজে বাসন্তীর কথা পড়ে তাঁরা তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিতে চান। রবিবার রনধীশবাবু ও শিশিরবাবুকে নিয়ে বাসন্তীর বাড়িতে যান পেশায় ব্যবসায়ী এলাকায় সমাজসেবী হিসেবে পরিচিত স্বপন সরকার এবং বাসন্তীর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অদিতি মুখোপাধ্যায় মজুমদার। দুই প্রবীণ তাঁদের অবসরভাতা থেকে বাসন্তীর হাতে মিষ্টি আর পাঁচ হাজার টাকা তুলে দেন। বাসন্তী তাঁদের জানায় অলচিকি নিয়ে পড়তে চায় সে। রনধীরবাবু বলেন, ‘‘এখনও সমাজে কুসংস্কারের বলি হন কতজন। কিন্তু বাসন্তীর মতো মেয়ে এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে সেই কুসংস্কার কাটিয়ে যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছে এবং সফল হয়েছে তা এক দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। বাসন্তীর পাশে আমরা আছি। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই ধরনের কুসংস্কারের যোগ্য জবাব দিক ও, এটাই আমরা চাই।’’
আর দুই প্রবীণের এই আত্মিকতায় আপ্লুত বাসন্তী। স্কুলের প্রধানশিক্ষিকাই আলাপ করিয়ে দেন। মিষ্টি আর আর্থিক অনুদান পেয়ে লজ্জা পেয়ে দুই বৃদ্ধকে প্রণাম করে। চোখের কোল ভেজে। খানিক চুপ করে বাসন্তী বলে, ‘‘আমি ওঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’’