জলের স্তর কমায় শঙ্কায় এমটিপিএস

এমন পরিস্থিতিও যে আসতে পারে, আঁচ করতে পারেননি ডিভিসি-র মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের (এমটিপিএস) কর্তারা। দুর্গাপুর ব্যারাজের লকগেট বেঁকে জল বের হয়ে শুকিয়ে কাঠ দামোদরের জলাধার। এর জেরে ওই ব্যারাজ থেকে জল আসা একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে এমটিপিএসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩২
Share:

এমন পরিস্থিতিও যে আসতে পারে, আঁচ করতে পারেননি ডিভিসি-র মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের (এমটিপিএস) কর্তারা। দুর্গাপুর ব্যারাজের লকগেট বেঁকে জল বের হয়ে শুকিয়ে কাঠ দামোদরের জলাধার। এর জেরে ওই ব্যারাজ থেকে জল আসা একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে এমটিপিএসে। সঞ্চিত জলে কী করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলবে, তা ভেবে চোখ কপালে উঠেছে এমটিপিএস কর্তাদের। বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক আধিকারিক পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “যেখানে অঢেল জল চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলেও ফিরে তাকাতাম না, সেখানে এখন এক বিন্দু জলও যাতে পাইপের ফুটো দিয়ে না গলে যায়, তা নিশ্চিত করতে দিনভর ঘুরে বেড়াচ্ছি।”

Advertisement

এমটিপিএসের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (১) মৃণাল বিশ্বাস সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, “শুক্রবার দুপুরের পর ব্যারাজ থেকে জল পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমাদের কাছে যে পরিমাণ জল মজুত রয়েছে, তা দিয়ে আগামী তিন দিন আমরা ইউনিট চালিয়ে যেতে পারব।” এর মধ্যে সমস্যা না মিটলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়বে বলেই আশঙ্কা মৃণালবাবুর।

এমটিপিএস সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে বিদ্যুৎকেন্দ্রের আটটি ইউনিটের মধ্যে পাঁচটি ইউনিট চালু রয়েছে। দৈনিক ১২০০ থেকে ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় এখান থেকে। বিদ্যুৎ তৈরির জন্য প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হয়ে বলে, তা ঠান্ডা রাখতে প্রচুর জলের প্রয়োজন। এ ছাড়া জ্বালানি কয়লা পরিষ্কারের (কোল ওয়াশারি) জন্যও জল লাগে। তা ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের আবাসনেও জল প্রয়োজন। সব প্রয়োজনের জন্য দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে পাইপলাইনে আসা জলই ভরসা।

Advertisement

বিদ্যুৎকেন্দ্রে দু’টি রিজার্ভার রয়েছে। এই মুহূর্তে রিজার্ভারগুলিতে জলের স্তর ১০৫.৮ মিটার। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, শুক্রবার দুপুর একটার পর থেকে ব্যারাজের জল পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ০.৩ মিটার জল খরচ হয়েছে। এমটিপিএসের কর্তারা জানাচ্ছেন, এই হারে জল খরচ হতে থাকলে আগামী তিন দিন টানাটানি করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানো সম্ভব। কারণ জলস্তর ১০৪ মিটারের নীচে নেমে গেলে তখন আর পাম্প চালানো যাবে না।

ঘটনা হল, এমটিপিএসের বিদ্যুতের উপরে জেলার বড়জোড়া ও মেজিয়া শিল্পাঞ্চলের বেশির ভাগ কারখানাই নির্ভরশীল। এ ছাড়াও এমটিপিএসের বিদ্যুৎ গ্রিডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল হয়ে গেলে, সার্বিক ভাবেই তার প্রভাব পড়বে বলে জানাচ্ছেন এমটিপিএস কর্তারা।

কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেই নয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের আবাসিকেরাও দুর্গাপুর ব্যারাজের পাইপ লাইনের জলের উপরেই নির্ভরশীল। এমটিপিএসের আবাসনে প্রায় ২০০০ ফ্ল্যাটে কমবেশি ছ’হাজারের উপর কর্মী ও তাঁদের পরিজনেরা বাস করেন। দৈনিক তিন বার করে পাইপ লাইনে আবাসিকদের ব্যারাজের জল দেওয়া হতো। তবে এই ঘটনায় জল বাঁচাতে এমটিপিএস কর্তৃপক্ষ শনিবার বিকেলে মাইকে ঘোষণা করে জানিয়ে দেয়, দিনে এখন এক বার করে আবাসনে জল দেওয়া হবে রবিবার থেকে। মৃণালবাবু বলেন, “যতটা সম্ভব জল বাঁচানোই আমাদের লক্ষ্য। তাই আবাসিকদের জন্যও জলের ব্যবহার কম করতে বলা হয়েছে।’’

এমটিপিএস আবাসনের বাসিন্দা মদনগোপাল গঙ্গোপাধ্যায়, সাগর কর্মকাররা বলেন, “এমন পরিস্থিতি আসতে পারে কোনও দিন ভাবিনি। এমটিপিএসে জলের অভাব এর আগে কখনও হয়নি। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হয়, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি।” কেবল এমটিপিএসই নয়, সম্প্রতি দামোদর নদের জল পাইপ লাইনের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন গ্রামে সরবরাহ করা হচ্ছে। ওই প্রকল্পে জল পাচ্ছে বাঁকুড়া পুরসভাও। ব্যারাজের জল বেরিয়ে যাওয়ায় এই প্রকল্পটিও বন্ধ হয়ে পড়েছে। এর ফলে বাঁকুড়া পুরসভায় জলের ঘাটতি অবশ্য এখনও দেখা দেয়নি বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “শহরের দ্বারকেশ্বর ও গন্ধেশ্বরীর নদী গর্ভে জলের কোনও কমতি নেই। ফলে শহরে এখনও তেমন প্রভাব পড়েনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement