বিরোধী ভাঙিয়েই এগোচ্ছে তৃণমূল

এ ভাবে একের পর এক বিরোধী কাউন্সিলরের দলবদলে রেলশহরে তৃণমূলের পুরবোর্ড গঠন কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেল। খড়্গপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর শেখ হানিফ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা মহকুমাশাসককে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “পুরসভার ৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর দলবদলের কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০০:৫৪
Share:

খড়্গপুরে বিজেপির অবস্থান।

এ ভাবে একের পর এক বিরোধী কাউন্সিলরের দলবদলে রেলশহরে তৃণমূলের পুরবোর্ড গঠন কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেল। খড়্গপুর পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর শেখ হানিফ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তাঁরা মহকুমাশাসককে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “পুরসভার ৪ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর দলবদলের কথা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। তাঁরা যথাক্রমে সিপিআই ও বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানের কথা জানিয়েছেন।”

Advertisement

বিরোধীদের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরাজ কায়েম করে হুমকি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চলেছে তৃণমূল। আর সে কাজে মদত দিচ্ছে পুলিশ। সিপিআইয়ের জেলা সহ-সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, “শেখ হানিফ চাপে ছিলেন। শুনেছি ওঁকে দিয়ে জোর করে তৃণমূলে যোগদানের কথা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে।” এ ভাবে মরিয়া হয়ে তৃণমূলের গড়া পুরবোর্ডের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “যে ভাবে এই কাজে দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়া হল, তাতে পুলিশও আগামী দিনে দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।’’ শাসক দলের সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে এ দিন মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ-জমায়েতও করে বিজেপি।


নজরবন্দি কাউন্সিলরদের বাড়ি। খড়্গপুরের ইন্দায় বিজেপি কাউন্সিলর সুখরাজ কৌরের বাড়ির সামনে পুলিশ পাহারা।

Advertisement

রবিবারই মেদিনীপুরে এসে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন রেলশহরের বিধায়ক জ্ঞান সিংহ সোহন পাল। গত কয়েকদিনের খড়্গপুরের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দলের কাউন্সিলরদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। তারপরই সোমবার থেকে সব কাউন্সিলরের বাড়িতে রক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। মালঞ্চ, গোয়ালাপাড়া এবং বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ৩টি পুলিশ পিকেট করা হয়েছে। ৩টি পুলিশ পেট্রোলিং দলেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীরা ঠিক মতো কাজ করছেন কি না, তা দেখবে এই দল। শহরে তারা নজরদারিও চালাবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “খড়্গপুরের সব কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের ব্যবস্থা
করা হয়েছে।”

খড়্গপুরে একের পর এক অশান্তির ফলেই কী এই ব্যবস্থা? পুলিশ সুপারের জবাব, “শহরে কোনও খুন-জখম হয়নি। রক্তপাত হয়নি। অপহরণের ঘটনাও ঘটেনি। তাহলে আতঙ্কের পরিবেশের কথা বলা হচ্ছে কেন?” পুরবোর্ড গঠনের দিন কাউন্সিলরদের বাড়ি থেকে পুলিশ এসকর্ট করে পুরসভায় আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার। বোর্ড গঠন হলে পুলিশ এসকর্ট করেই কাউন্সিলরদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।

পুলিশ সুপার বলেন, “কোনও কাউন্সিলর যদি মনে করেন, পুলিশ এসকর্টে হবে না, পুলিশ সুপারের নিজের থাকা উচিত, তাহলেই তিনি সঠিক নিরাপত্তা পাবেন, তখন আমিই থাকব। আমিই ওই কাউন্সিলরকে পুলিশ এসকর্ট করে পুরসভায় নিয়ে আসব, আবার পরে বাড়িতে পৌঁছে দেব।”


একই ছবি ইন্দায় কংগ্রেসের অপর্ণা ঘোঘ (বাঁ দিকে) ও ট্রাফিকে কংগ্রেসের মধু কামির বাড়িতেও।

রেলশহরের এক বিরোধী কাউন্সিলরের অবশ্য বক্তব্য, “বিষয়টাকে এত সহজ করে দেখা ঠিক হবে না। কেন বাড়ির সামনে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হল? এর ফলে তো পুলিশেরও সব কিছুর উপর নজর রাখা সহজ হচ্ছে। কাউন্সিলরের বাড়িতে কে কে আসছেন, বাড়ির কে কখন বেরোচ্ছেন, কখন ফিরছেন, সব কিছুই।”

ক’দিন আগেই বিজেপির চার কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এ দিন আরও দুই কাউন্সিলর যোগ দেওয়ায় বৃহত্তম দল হিসেবে খড়্গপুর পুরবোর্ড গঠন তৃণমূলের পক্ষে প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল। ৩৫ আসনের এই পুরসভায় এখন সমীকরণটা দাঁড়াল— তৃণমূল ১৭, কংগ্রেস ১১, বাম ৫, বিজেপি ২। এই অবস্থায় কংগ্রেস কাউন্সিলরদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার মেদিনীপুরে জ্যুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া গোপন জবানবন্দিতে ধৃত দুষ্কৃতী হোন্দল কয়েকজনের নাম নিয়েছে। সেই তালিকায় কংগ্রেসের কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডে, ভেঙ্কট রামনা ও সনাতনলাল যাদবের নাম রয়েছে। হোন্দলের দাবি, কংগ্রেস কাউন্সিলরদের নির্দেশেই সে হামলা করেছিল। ওই কাউন্সিলরদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে বলে খবর। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “হোন্দল জবানবন্দিতে যে কয়েকজনের নাম জানিয়েছে সেটা দেখা হচ্ছে।” অবশ্য এখনও পর্যন্ত চেষ্টা করেও একজন কংগ্রেস কাউন্সিলরকে ভাঙাতে পারেনি তৃণমূল। ১১টি আসন নিয়ে কংগ্রেসও বোর্ড গঠনের আশা ছাড়ছে না। কংগ্রেসের শহর সভাপতি অমল দাস বলেন, “পুলিশ ও শাসকদল একসঙ্গে দুষ্কৃতীদের দিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে। শুনেছি আমাদের কাউন্সিলরদের মিথ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে। তবে এখনও আমার বিশ্বাস আমরাই বোর্ড গঠন করব।”

বোর্ড গঠনে সক্রিয় থাকবে বামেরাও। সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “কাউন্সিলরদের তৃণমূলে যোগদান দুর্ভাগ্যজনক। বোর্ড হবে গোপন ব্যালটে। সেখানে জোর করে দুষ্কৃতীদের দিয়ে পিস্তল দেখিয়ে, পুলিশের মামলার ভয় দেখিয়ে কী মানুষের মন জয় করা যায় না। তাই গোপন ব্যালটে ভোট হলে তৃণমূল বোর্ড গড়তে পারবে না।”

— নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement