বিধানসভার ভিতরে-বাইরে প্রতিবাদ করে, আদালতের দ্বারস্থ হয়েও খড়্গপুর পুরসভা শেষ পর্যন্ত হাতছাড়াই হতে চলেছে কংগ্রেসের।
আজ, বৃহস্পতিবার খড়্গপুর পুরসভার বোর্ড গঠন। কিন্তু তার আগেই বুধবার খড়্গপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই কাউন্সিলর শর্মিষ্ঠা সিংহ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে এই মুহূর্তে ৩৫ আসনের পুরবোর্ডে শাসক দল ম্যাজিক সংখ্যায় পৌঁছে গিয়েছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং পরিষদীয় সচিব তাপস রায় এ দিন রাতেই খড়্গপুরে পৌঁছন। আজ শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তাঁরা দু’জনই উপস্থিত থাকবেন।
খড়্গপুর পুরসভায় তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছেন ১৮ জন কাউন্সিলর। এর মধ্যে তৃণমূলের প্রতীকে জেতা কাউন্সিলর ১১ জন। বিজেপির ৫ জন এবং সিপিআইয়ের দু’জন কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় পুরবোর্ড গঠনে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে শাসক দল। কংগ্রেসের ১১ জন কাউন্সিলর থাকলেও তারা অবশ্য এখনও আশা ছাড়তে নারাজ। এই কাউন্সিলরদের গোপন ডেরায় রাখা হয়েছে তাদের আশা, ভোটাভুটির সময় সব হিসেব উল্টে গিয়ে ফল তৃণমূলের বিরুদ্ধেও যেতে পারে। আজ ভোটাভুটিতে তাঁদের কাউন্সিলররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, তা দেখতে এ দিনই রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার এবং প্রভাকর তিওয়ারি খড়্গপুরে পৌঁছেছেন।
খড়্গপুরে তাদের কাউন্সিলরদের বাড়িতে শাসক দলের হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল কংগ্রেস। নির্বিঘ্নে পুরবোর্ড গঠনে নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ চেয়ে কংগ্রেসের ১১ জন কাউন্সিলরই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। এ দিন ওই কাউন্সিলরদের নিরাপত্তা নিয়ে আপস না করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পরে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ জানান, পুরবোর্ড গড়ার দিন কোনও অভিযোগ পেলে বা কাউন্সিলররা কোনও অনুরোধ করলে তৎক্ষণাৎ তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী। পুলিশি পাহারায় ওই কাউন্সিলরদের ভোট দিতে নিয়ে যাওয়া এবং বাড়িতে ফিরিয়ে আনার নির্দেশও আদালত দিয়েছে বলে অরুণাভবাবু জানান। হাইকোর্টে শুনানির সময় সরকার পক্ষের আইনজীবী জেলার পুলিশ সুপারের একটি রিপোর্ট পেশ করে জানান, ইতিমধ্যেই ওই কাউন্সিলরদের বাড়িতে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এমনকী স্পর্শকাতর এলাকাতে পুলিশি টহলও চলছে। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য জানান, নিরাপত্তার যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
খড়্গপুরের ঘটনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবারই বিধানসভায় স্পিকারের রুলিং চেয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল কংগ্রেস পরিষদীয় দল। স্পিকার রুলিং না দেওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিধানসভা বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এ দিনও অধিবেশন শুরুর সময় থেকেই বিধানসভা চত্বরে তারা বিক্ষোভ দেখায়। খড়্গপুরে দলীয় কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে শাসক দলের সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এ দিন বিধানসভার বাইরেও পথে নেমে রাজ্য জুড়ে চাক্কা জ্যাম করে কংগ্রেস।
পুলিশকে দিয়ে বিরোধী কাউন্সিলরদের ভয় দেখিয়ে দলে টানার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের অবশ্য দাবি, ‘‘অভিযোগ যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, তা হলে আমি পুরমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেব।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘বিরোধী দলের কাউন্সিলররা উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলে যোগ দিতে চাইছেন।’’ এ দিন সিপিআইয়ের কাউন্সিলরের দলবদল সম্পর্কে অবশ্য দলের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পণ্ডা বলেন, ‘‘কী হয়েছে, জানি না।’’
পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব এবং বিধায়ক মানস ভুঁইয়াকে এ দিন নিজের কক্ষে ডেকে পাঠান স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের বয়কট প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন তিনি। বয়কট তোলা হবে কি হবে না, তা নিয়ে আজ পরিষদীয় দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে বলে পরে সোহরাব জানান। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বিধানসভা বয়কটের সিদ্ধান্তে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অসন্তুষ্ট। বিধানসভা বয়কট না করে কক্ষে প্রতিবাদ জানাতেই তিনি সোহরাবকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশে আজই কংগ্রেস পরিষদীয় দল বয়কট প্রত্যাহার করে নিতে পারে বলে দলীয় সূত্রের খবর।
আইসি বদল
পুরবোর্ড গঠনের ঠিক আগের রাতে খড়্গপুর টাউন থানার আইসি দীপক সরকারকে বদলি করা হল হাওড়ায়। দীপকবাবুর জায়গায় আসছেন লালগড়ের আইসি জ্ঞানদেওপ্রসাদ শাহ।