প্রতীকী ছবি।
ভাটপাড়া থানায় ভরসন্ধ্যায় পুলিশের উপস্থিতিতে একটি পারিবারিক সমস্যা নিয়ে ‘তোলপাড়’ চলছে। আপাত ভাবে নারীসুলভ, মধ্য তিরিশের বেঁটেখাটো একটি অবয়ব কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, ‘‘আমাকে ওরা বকে, মারে কেন আমি ছেলেদের মতো জামা-প্যান্ট পরি। ছেলেদের মতো নই, বিশ্বাস করুন আমি তো ছেলেই।’’
বাড়ির লোক (মা, বাবা, দিদি) পাল্টা বলছেন, ‘‘কিসের ছেলে! তা হলে ও ঋতুমতী হয় কী ভাবে!’’
সমাজকর্মীদের একটি দল, তার মধ্যে রূপান্তরকামী মেয়ে, পুরুষ অনেকেই রয়েছেন— তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করেন, শরীরে মেয়ে হলেও এক জন রূপান্তরকামী পুরুষ আসলে পুরুষ। তাঁর রূপান্তরের নানা পর্যায় থাকে। অস্ত্রোপচার এবং অন্যান্য চিকিৎসা-পদ্ধতি প্রয়োগ করার আগে পর্যন্ত স্বাভাবিক মেয়েদের মতোই কারও ‘পিরিয়ড’ হতেই পারে।
ভাটপাড়ায় রূপান্তরকামী এক পুরুষ তাঁর পরিবারের কাছে নিগৃহীত হয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি সংবেদনশীল ভঙ্গিতে দেখতে বলেছিলেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। ভাটপাড়ার পুলিশ সেটাই করে দেখিয়েছে। রূপান্তরকামী ওই পুরুষের ফোন পেয়ে শুক্রবার পুলিশকে সব জানিয়েছিলেন রূপান্তরকামী নারী তথা সমাজকর্মী রঞ্জিতা সিংহ। নিজে রূপান্তরকামী পুরুষ আইনজীবী অঙ্কন বিশ্বাস, রূপান্তরকামী নারী তিস্তা দাস, বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়, অপরাজিতা গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ সমাজকর্মীরা ভাটপাড়ায় হাজির হন। তত ক্ষণে নিগৃহীত রূপান্তরকামী পুরুষটিকে বাঁচাতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েছেন আর এক জন রূপান্তরকামী নারী। পুলিশ সবাইকে থানায় নিয়ে আসে। আসেন আক্রান্ত রূপান্তরকামী ‘তরুণের’ মা-বাবা-দিদিও। ভরসন্ধ্যায় বোঝানোর পালা শুরু হয়।
ভাটপাড়ার আইসি রাজর্ষি দত্ত শনিবার বলেন, ‘‘এক-একটা ব্যস্ত দিনে পুলিশের এত সময় থাকে না। কিন্তু বুঝিয়ে কাজ হলে, আমরা যে কোনও নাগরিককেই সময় দিতে চেষ্টা করি।’’ রূপান্তরকামী ‘তরুণকে’ মারধরের অভিযোগে তাঁর বাবা ও দিদির নামে মামলা হয়েছে। অভিযোগকারীর চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। তিনি বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। রাজর্ষিবাবু বলেন, ‘‘নানা কারণে অভিযোগকারী অবসাদে ভুগছেন। পরিবারটিকে বুঝিয়ে একসঙ্গে রাখাই উদ্দেশ্য। এখনই কাউকে গ্রেফতারের দরকার নেই।’’ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ২০১৭-র রিপোর্ট বলছে, এ দেশে ৯৮% রূপান্তরকামী ছেলে, মেয়েই বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তবে ৩৭৭ ধারা অপরাধের তকমামুক্ত হওয়ার পরে ছবিটা খানিক পাল্টেছে। সমাজকর্মীদের মতে, রূপান্তরকামী পুরুষেরা অনেকে শরীরে নারীসুলভ হওয়ায় দ্বিগুণ সঙ্কটে পড়েন। তাঁদের যৌন হেনস্থার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, আবার শরীর-মনে লিঙ্গগত গরমিলের জন্য সামাজিক সঙ্কট তো থাকেই।