অন্বেষার (বাম দিক থেকে তৃতীয়) ডাকে সাড়া দিয়ে সিঁদুর খেলায় শামিল রূপান্তরকামী থেকে সমকামী, সকলেই। —নিজস্ব চিত্র।
বিজয়া দশমীর দিন বিবাহিত মহিলারা একে অপরের সঙ্গে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। কিন্তু বিধবা নারীর উপরে নানা সামাজিক বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া হলেও, পুরুষের জন্য এমন নিয়মের কড়াকড়ি থাকে না। এ বার সেই নিয়মের গণ্ডি অতিক্রম করেই সিঁদুর নিয়ে খেলা ভাঙার খেলায় মাতোয়ারা হলেন শহরের অন্বেষা, অনুকূলরা। বছর চারেক আগে স্বামীকে হারানো অন্বেষা তাঁর বাড়ির পুজোয় সিঁদুর খেলায় শামিল হয়েছেন আগেও।
ঘটনা এই শহরেরই, নিউটাউনে। ঘটনার চরিত্ররাও কমবেশি এই শহরের। তবে এই ‘সাহসী’ পদক্ষেপের ভগীরথ অন্বেষা চক্রবর্তী। ২০১৮ সালে বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারান তিনি। স্বপ্ন ছিল শাঁখা সিঁদুর পরে আর পাঁচ জন মেয়ের মতোই বিজয়া দশমী উদ্যাপন করবেন। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। তবে থেমে থাকেননি অন্বেষা। নিজের বৈধব্যকালেই সিঁদুর খেলেন তিনি। তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি সে সময়। এখন অবশ্য তিনি নিজেই পুজোর উদ্যোক্তা। নিউটাউনের একটি বিলাসবহুল আবাসনে তিনি প্রায় একক উদ্যোগেই দুর্গাপুজো করেন। তাঁর পুজোর বিশিষ্টতা এই যে, দশমীর দিন সেখানে সিঁদুর খেলায় শামিল হন সমকামী থেকে রূপান্তরকামী, সমাজের সর্বশ্রেণির মানুষ। সম্প্রতি অন্বেষা অবশ্য দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন। কিন্তু তিনি চান বিধবা থেকে যৌনকর্মী, সকল মানুষই সিঁদুরখেলায় শামিল হোন।
অন্বেষার নিজের কথায়, “মা দুর্গা তো সবার। তবে কেন শুধু সধবা মহিলারাই সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে, আর বাকিরা পারবে না?” অন্বেষার ডাকে সাড়া দিয়ে সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণ করতে এসেছিলেন রূপান্তরকামী অনুকূল ধাড়া, যিনি রাজকুমারী কোকো বলেই সমধিক পরিচিত। এসেছিলেন পেশায় ‘হেয়ার স্টাইলিস্ট’ পুষ্পক সেনও। তাঁরা প্রত্যেকেই সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণ করেন।
উত্তর কলকাতা থেকে এসেছিলেন, বিজয়িতা মৈত্র। বিজয়িতাও ২০২১ সালে কোভিডে স্বামীকে হারিয়েছেন। কিন্তু বুধবার তাঁকেও দেখা গেল অন্বেষার ডাকে সিঁদুর খেলায় শামিল হতে। বিজয়িতা এই প্রসঙ্গে বলেন, “স্বামী মারা যাওয়ার পর সাদা পোশাক পরতাম, নিজেরই নিজেকে ভীষণ অচেনা ঠেকত। পরে বুঝলাম এ ভাবে কোনও মৃত মানুষকে সম্মান জানানো যায় না।” পুষ্পকের কথায়, “সিঁদুর খেলা যদি একটা খেলাই হয়ে থাকে, তবে বিবাহিত মহিলা ছাড়া অন্যরা এই খেলায় যোগ দিতে পারবে না কেন?”