উলুবেড়িয়ায় স্টেশনে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়।—নিজস্ব চিত্র।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে টানা অবরোধ-আগুন-ভাঙচুরে বিপর্যস্ত হল দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন অংশে রেল চলাচল। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ আকার নেয় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের উলুবেড়িয়াতে এবং পূর্ব রেলের কৃষ্ণনগর-লালগোলা শাখার বেলডাঙা স্টেশনে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলা তিনটের পর থেকে লালগোলা-কৃষ্ণনগর শাখার রেজিনগর এবং বেলডাঙা স্টেশনে অবরোধ শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। ওই সময়েই অবরোধ শুরু হয় বারুইপুর-ডায়মন্ড হারবার শাখার বাসুলডাঙা স্টেশনে। অন্য দিকে, বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ প্রায় আড়াইশো-তিনশো বিক্ষোভকারী উলুবেড়িয়া স্টেশনের কাছে লাইনে নেমে জাতীয় পতাকা পুঁতে অবরোধ শুরু করেন। আটকে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস-সহ একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, উলুবেড়িয়ায় বিক্ষোভকারীরা হঠাৎই উত্তেজিত হয়ে ট্রেনচালকের কেবিন লক্ষ্য করে ইট ছোড়া শুরু করেন। লাইনের ধারের পাথর তুলে নিয়ে এলোপাথাড়ি ছোড়া হয় উলুবেড়িয়া স্টেশনের কাছে কেবিনেও। বিক্ষোভকারীরা ট্রেন লাইনের উপর টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু করলে ট্রেন যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়়ে। সেই আতঙ্কের জেরে অনেকেই ট্রেন থেকে নেমে পড়েন। রেল সূত্রে খবর, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চালক এবং এক জন রেল পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: সিএবি আঁচ রাজ্যেও, রেললাইনে আগুন, সড়ক অবরোধ, ব্যাপক অশান্তি
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা পাথরবৃষ্টি করছে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনের চালকের কেবিন লক্ষ্য করে। চালক এবং সহকারি চালক বার বার ওয়্যারলেসে উলুবেড়িয়ার স্টেশন মাস্টারের কাছে সাহায্য চাইছেন এবং রেল সুরক্ষা বাহিনী পাঠানোর আবেদন জানাচ্ছেন। কিন্তু আরপিএফের কোনও খবর দিতে পারেননি স্টেশন মাস্টার। ঠিক সেই সময় অন্য লাইনে একটি দূরপাল্লার ট্রেন এলে সেই ট্রেন লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি পাথর বৃষ্টি করতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। যদিও ওই ভিডিয়োর কোনও সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার।
আরও পড়ুন: সিএবি আঁচে জ্বলছে উত্তর-পূর্ব, শিলং সফর বাতিল করলেন অমিত শাহ
ঠিক একই ভাবে বিক্ষোভকারীরা হিংসাত্মক হয়ে ওঠেন বেলডাঙা স্টেশনে। তাঁরা সেখানেও লাইনের উপরে টায়ার, কাঠ জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত খবর সেই অবরোধ চলছে। সেখানে স্টেশন চত্বরেও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষোভকারীরা এমনটাই রেলের অভিযোগ। এর পর অবরোধ শুরু হয়ে যায় জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ স্টেশনেও। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওই শাখায় বাকি সমস্ত স্টেশনে অবরোধ উঠলেও বেলডাঙায় অবরোধ চলায় ওই শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর। বিক্ষোভকারীরা স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লাইন রক্ষণাবেক্ষণের কোচে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন দেওয়া হয় স্টেশন সুপারের পাশে থাকা রুট রিলে কন্ট্রোলের কেবিনে। ফলে সিগন্যাল ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে ওই শাখায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় বাতিল করা হয়েছে ওই শাখার সমস্ত ট্রেন চলাচল। পুলিশ সূত্রে খবর, বেলডাঙায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কও অবরোধ করেছেন কয়েক হাজার জনতা। সেখানে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ চলছে। বেলডাঙা থানাতেও ভাঙচুরের খবর পাওয়া গিয়েছে।
জেলা পুলিশের একটি বড় বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও তারা এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। রেল সূত্রে খবর, উলুবেড়িয়াতে সাড়ে সাতটা নাগাদ অবরোধ উঠলেও ট্রেন লাইনের উপর সিমেন্টের স্ল্যাব বিভিন্ন জায়গায় ফেলে গিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সেগুলো না সরানো গেলে ট্রেন চলাচল সম্ভব নয়। বেলডাঙার মতো এখানেও রুট রিলে কেবিনে বেশ কিছু যন্ত্র নষ্ট হয়েছে বিক্ষোভকারীদের হামলায়। ফলে ওই শাখাতেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে রেল সূত্রে। এই অবরোধের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একাধিক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।