—ফাইল চিত্র।
গোলাগুলির আতঙ্কে ভিড় কমেছে ভূস্বর্গ কাশ্মীরে। উত্তর-পূর্ব ভারতও একটা দোলাচলের মধ্যে রয়েছে। এ সবের মধ্যেই ভুটান পর্যটনের আকাশেও এ বার সিঁদুরে মেঘ! কারণ ‘এশিয়ার সুইৎজ়ারল্যান্ড’ বেড়াতে নির্দিষ্ট বাজেট ছাড়াও বাড়তি বেশ কিছু টাকা ‘সরকারি ফি’ বাবদ খরচ করতে হবে। যত দিন ভুটানে থাকবেন তত দিনের হিসেবে মাথাপিছু টাকা দিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে পর্যটকেরা কতটা ভুটানমুখী হবেন তা নিয়ে আশঙ্কা রাজ্যের ভ্রমণ সংস্থাগুলির।
সম্প্রতি ভুটান আইনসভার নিম্নকক্ষে পর্যটন সংক্রান্ত একটি আইন পাশ হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারত, বাংলাদেশ ও মলদ্বীপ থেকে যাওয়া পর্যটকদের মাথাপিছু প্রতি দিন ১২০০ টাকা করে ‘সুস্থায়ী উন্নয়ন’ ফি দিতে হবে। আগামী জুলাই থেকে ওই আইন লাগু করা হবে। সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে ভারতীয় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ভুটানে। ২০১৮ সালে তুলনায় ২০১৯ সালে ভারত, বাংলাদেশ ও মলদ্বীপ থেকে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি পর্যটক ভূটানে গিয়েছেন। মাত্রাতিরিক্ত পর্যটকের হাত থেকে প্রকৃতিকে বাঁচাতেই ভুটান সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এই নয়া আইনে ‘বজ্র ড্রাগনের দেশ’-এর পর্যটনেরই ক্ষতি হবে বলে দাবি করে কলকাতার একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্তা সৌমিত্র কুণ্ডু বলেন, ‘‘গত কুড়ি বছরে ভুটানে পর্যটক বেড়েছে। বাড়তি খরচ চাপানো-সহ গত কয়েক বছরে ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ভুটান সরকার এত নিয়ম চালু করেছে, তাতে খুবই সমস্যা হচ্ছে।’’ ২০১৮ থেকে ভুটানে নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে, পর্যটক দলের সঙ্গে সেখানে কোনও রান্নার লোক, কর্মী পাঠাতে পারবে না ভারতীয় ভ্রমণ সংস্থাগুলি। সরাসরি তারা ভুটানের হোটেলও বুকিং করতে পারবে না। এমনকি পারমিটও সংগ্রহ করতে হয় ফুন্টসলিং থেকে। পারমিট নিতেই পর্যটকদের এক দিন নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ ভ্রমণ সংস্থাগুলির।
এত নিয়মকানুন মেনে ভুটানে পর্যটক পাঠাতে গিয়ে ব্যবসায় সমস্যা হচ্ছিল বলেই দাবি ভ্রমণ সংস্থাগুলির কর্তাদের একাংশের। ১২০০ টাকার বাড়তি খরচ সমস্যা আরও বাড়াবে বলেই তাঁদের দাবি। তাঁরা জানান, এত দিন ভুটানে থাকা, খাওয়াদাওয়া, ঘোরাঘুরি, যাতায়াত নিয়ে সাত দিনের জন্য এক পর্যটকের খরচ হত প্রায় ২০ হাজার টাকা। ‘সুস্থায়ী উন্নয়ন’ ফি বাবদ যুক্ত হবে বাড়তি ৮৪০০ টাকা।
একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্তা চন্দ্রপ্রকাশ ভট্ট জানান, অধিকাংশ পর্যটকই উত্তরবঙ্গের হাসিমারা থেকে ভারতীয় গাড়ি নিয়ে ভুটানে যান। দিন প্রতি হাজার চারেক টাকা দিতে হত। চন্দ্রপ্রকাশ বলেন, ‘‘এ বার ভারতীয় চালকের জন্য দিনপিছু বাড়তি টাকা দিতে হবে।’’ ট্র্যাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সভাপতি বাচ্চু চৌধুরী বলেন, ‘‘এই খরচ মধ্যবিত্তদের সমস্যায় ফেলবে। ব্যবসাও ধাক্কা খাবে। ভুটানের অভিবাসন অফিসটি ফের কলকাতায় চালু করলে পর্যটকদের একটা দিন বাঁচত।’’ হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক-এর সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘আমরা ভুটান সরকারকে চিঠি দিয়েছিলাম। বিলটি পুরো দেখে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব। প্রয়োজনে কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগ করব।’’