গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দশম দিন। আমরণ অনশনে বসে রয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এর মধ্যে নবান্ন এবং ডব্লিউবিজেডিএফ (ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স’ ফ্রন্ট)-এর মধ্যে এক দিন বৈঠক হলেও তা ‘নিষ্ফলা’ রয়ে যায়। অতঃপর কী? উদ্বেগ বাড়ছে অনশনকারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে। এর মধ্যেই আশার আলো দেখা গেল সিনিয়র ডাক্তারদের বিভিন্ন সংগঠনকে নবান্নের তরফে আজ বৈঠকে ডাকার পর। প্রতি দিনই অনশনমঞ্চ ঘিরে উপস্থিত হচ্ছেন বহু মানুষ। প্রত্যেকেই উদ্বিগ্ন অনশনকারীদের নিয়ে।
পুজো কাটল, অচলাবস্থা কাটবে কবে
২০০ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে ধর্মতলায় অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সমাধানসূত্র খুঁজতে গত বুধবার রাজ্য সরকারের তরফে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে আন্দোলনকারীরা বৈঠকে বসেছিলেন বটে। কিন্তু বৈঠক ‘নিষ্ফল’ই হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারেরা দাবি করেছিলেন, বৈঠকে মুখ্যসচিব তাঁদের অনশন তুলে সুষ্ঠু ভাবে ‘পুজো কাটানোর’ পরামর্শ দিয়েছেন। তা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অনশন তো ওঠেইনি, উল্টে আন্দোলন তীব্রতর করার পথে হেঁটেছেন তাঁরা। এখন পুজো কেটে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, উৎসবের আবহ কেটে গেলে কি বর্তমানের অচলাবস্থা কাটাতে আরও উদ্যোগী হবে রাজ্য সরকার? সোমবার বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছে রাজ্য সরকার। সেই বৈঠকের পরে কি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গেও বৈঠকে বসার তোড়জোড় শুরু করবে তারা? সমাধানসূত্র খুঁজতে ফের বৈঠকে বসবে দু’পক্ষ? সে দিকে নজর থাকবে। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীরা আজ রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। সিবিআইয়ের প্রতি অনাস্থার কথা রাজ্যপালকে জানাতে চান তাঁরা। মঙ্গলবার তাঁরা মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন। তবে আদালতের নির্দেশ মেনে কার্নিভালের কোনও রকম বাধা সৃষ্টি না করেই।
মুখ্যসচিবের সঙ্গে বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের বৈঠক
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-সহ বেশ কয়েকটি চিকিৎসক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সেই মর্মেই রবিবার সংগঠনগুলিকে ইমেল করে জানানো হয়। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় হবে সেই বৈঠক। নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, প্রত্যেক সংগঠন থেকে দু’জন প্রতিনিধি থাকতে পারবেন সেই বৈঠকে। ইমেলে বলা হয়েছে, সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনে আজ দুপুরে বৈঠক হবে। তাতে থাকার জন্য সংগঠনগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
অনশনরত ডাক্তারেরা কে কেমন আছেন
ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের আমরণ অনশন দশম দিনে পড়ল সোমবার। ইতিমধ্যেই তিন জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। পরে নতুন করে অনশনে যোগ দিয়েছেন আরও দু’জন। এই মুহূর্তে ধর্মতলায় সাত জন ডাক্তার আমরণ অনশন করছেন। রবিবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন পুলস্ত্য আচার্য। এনআরএসে তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছে। রবিবার অনশনকারীদের শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছে, স্নিগ্ধা হাজরার রক্তচাপ ১০২/৭২। তাঁর নাড়ির গতি ৮৮ এবং ক্যাপিলারি ব্লাড গ্লুকোজ় (সিবিজি) ৬৮। তনয়া পাঁজার রক্তচাপ ১০৮/৭৬। তাঁর নাড়ির গতি ৯৪ এবং সিবিজি ৭০। সায়ন্তনী ঘোষ হাজরার রক্তচাপ ১০৬/৭৮। তাঁর নাড়ির গতি ৮২ এবং সিবিজি ৬৯। পুলস্ত্য আচার্যের রক্তচাপ ১১২/৮৬। তাঁর নাড়ির গতি ৮৮ এবং সিবিজি ৭০। অর্ণব মুখোপাধ্যায়ের রক্তচাপ ১২০/৯০। তাঁর নাড়ির গতি ৮৮ এবং সিবিজি ৬৬। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও দু’জন অনশনে বসেছিলেন। তাঁদের এক জন অলোক বর্মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্য শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর রক্তচাপ ১০০/৬০। তাঁর নাড়ির গতি ৮০ এবং সিবিজি ৮৭। উল্লেখ্য, আগেই চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, সিবিজি ৬০-এর নীচে নেমে গেলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কিডনিও বিকল হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অর্ণব, স্নিগ্ধা এবং সায়ন্তনীর সিবিজি এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে স্নিগ্ধা এবং সায়ন্তনীর সিবিজি আরও নেমে গিয়েছিল।
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের আংশিক কর্মবিরতি
আজ থেকে বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে আংশিক কর্মবিরতি শুরু হচ্ছে। শনিবার ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ের সামনে থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে চিকিৎসকেরা জানান, আগামী সোমবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬ পর্যন্ত চলবে এই কর্মবিরতি। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছিলেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। আগামী ৪৮ ঘণ্টা ওই বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে জরুরি বিভাগ ছাড়া সব পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
সিদ্দিকি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত
শনিবার রাতে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান এনসিপি (অজিত) নেতা বাবা সিদ্দিকি। ঘটনায় ইতিমধ্যেই দু’জনকে গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ। ধৃতদের আদালতে পেশ করে আগামী ২১ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। খুনের ঘটনায় মুম্বইয়ের গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের যোগ রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তবে এই হত্যার নেপথ্যে রহস্য কী, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি। আরও কেউ লক্ষ্য কি না তা-ও খোঁজার চেষ্টায় পুলিশ।