শনিবার মেদিনীপুরে অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
পাঁচিল ভাঙা কাণ্ডে ‘বিতর্কিত’ হয়ে ওঠা বিশ্বভারতীর পাশে দাঁড়াতে আজ, রবিবার শান্তিনিকেতনে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা আগেই জানিয়েছিলেন, পাঁচিল ভাঙার পরে এক বার বিশ্বভারতীতে আসার জন্য শাহকে অনুরোধ করেছিলেন তিনি। সেই অনুরোধ রক্ষার্থেই এ বার শাহের বিশ্বভারতী সফর বলে অনুপমের দাবি। সঙ্গে আজ তাঁর রোড শো-ও করার কথা।
বস্তুত শাহকে বিশ্বভারতীতে আনার জন্য তৎপরতা ছিল বিজেপির দিক থেকেই। অনুপম বলেছিলেন, ‘‘অমিতজির দফতর থেকে বিশ্বভারতীর জন্য আমাদের কর্মসূচি বানাতে বলা হয়েছে।’’ সেই মতো বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং অনুপম। আজ বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট শাহ রেখেছন বিশ্বভারতীতে নানা কর্মসূচির জন্য। সেখান থেকে শ্যামবাটিতে এক বাউল
গায়কের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারতে যাওয়ার কথা শাহের। তার পর তাঁর কমর্সূচিতে রয়েছে হনুমান মন্দির থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত রোড শো এবং সাংবাদিক সম্মেলন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, শাহের আজকের বিশ্বভারতী সফরের দু’টি দিক আছে। এক, বিশ্বভারতীর পাঁচিল-কাণ্ডে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কারও কারও বিরুদ্ধে আমজনতার য়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, তাকে বিজেপির পালে আনার চেষ্টা করা। দুই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাঙ্গনে সময় কাটিয়ে নিজের এবং বিজেপির ‘বাঙালি, রবীন্দ্রনাথ এবং সংস্কৃতিপ্রেমী’ ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করা।
বিরোধীরা অবশ্য এই অবসরেই মনে করিয়ে দিচ্ছে, গত বছর এপ্রিল মাসে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বীরভূমে এসে ভাষণে শাহ বলেছিলেন, ‘‘এই বীরভূমের পবিত্র ভূমিতে জন্ম হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।’’ এই সূত্রেই মন্ত্রী তথা বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহের কটাক্ষ, ‘‘শাহ এবং তাঁর দল বিজেপির নেতারা জানেনই না রবীন্দ্রনাথ কলকাতার জোড়াসাঁকোর জাতক। বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ বলেই তাঁদের এই রকম ভুল হয়ে যায়।’’
গত ৯ ডিসেম্বর বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডার কলকাতা সফরকালে রাজ্য দলের তরফে টুইট করা হয়, ‘‘বিশ্বভারতী
হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান।’’ তাতে বিজেপির নেতা-কর্মীরা আদৌ বাংলা ভাষা জানেন কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে। পরে অবশ্য ওই টুইট মুছে দেওয়া হয়।
আজ শাহের রোড শোয়ের জন্য বোলপুর ডাকবাংলো মাঠ থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তা জুড়ে লাগানো হয়েছে ৬০টিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের জন্য পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার মিলিয়ে প্রায় ১৫০০ জন থাকবেন।
শাহের সফরের প্রতিবাদে শনিবার অবশ্য বোলপুর এবং বিশ্বভারতীতে দু’টি বিক্ষোভ হয়েছে। কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনের বিরোধিতা করে ‘গো ব্যাক শাহ’ স্লোগান দিয়ে বোলপুরে বিক্ষোভ দেখায় বাম-কংগ্রেস। বিশ্বভারতী ছাত্রছাত্রী ঐক্য মঞ্চের তরফে বামপন্থী পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখান বিশ্বভারতীতে। উপাসনা মন্দির থেকে মিছিল করে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং শাহের কুশপুতুল পোড়ান তাঁরা।