Suvendu Adhikari

আলোচনার মাধ্যমে ‘বিক্ষুব্ধ’ শুভেন্দুর মন বোঝার চেষ্টা শুরু করেছে তৃণমূল

আপাতত রাজ্যের রাজনীতিতে একটিই কৌতূহল— শুভেন্দু কি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ২১:৩৪
Share:

শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। ফাইল চিত্র।

‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সোমবার পূর্ব কলকাতার উপকণ্ঠে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন দলের এক বর্ষীয়ান সাংসদ। তারও কয়েক সপ্তাহ আগে দলের এক মন্ত্রী এবং এক প্রাক্তন সাংসদের সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হয়েছিল বলে খবর। যদিও কোনও বৈঠক নিয়েই আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও পক্ষ মুখ খোলেনি। বস্তুত, দু’পক্ষই বৈঠকের খবর উড়িয়ে দিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত বরফ গলেনি বলেই তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য। কিন্তু তার পরেও হাল ছাড়ছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। অদূর ভবিষ্যতে আবার শুভেন্দুর সঙ্গে দলের এক শীর্ষনেতার বৈঠক হতে পারে বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। দলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, শুভেন্দুর মন বোঝার জন্যই দফায় দফায় আলোচনা চলছে। দলের এক শীর্ষ নেতা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, শুভেন্দু এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে আলোচনার রাস্তা এখনও খোলা আছে।’’ তবে পাশাপাশিই ওই নেতার মন্তব্য, ‘‘শুভেন্দু তো আবার সকলের সঙ্গে কথা বলতে চায় না। ফলে আমাদেরও অনেক ভাবনাচিন্তা করে এগোতে হচ্ছে।’’

Advertisement

গত কয়েক মাসে শুভেন্দুর সঙ্গে দলের দূরত্ব অনেকটাই বেড়েছে। পুজোর আগে-পরে বিভিন্ন ‘অরাজনৈতিক’ সম্মেলনে শুভেন্দুর নানা মন্তব্য সেই দূরত্ব আরও বাড়িয়েছে। যা আরও ঘোরালো হয়েছে গত ১০ নভেম্বর। ওই দিন ‘নন্দীগ্রাম দিবস’-এ শুভেন্দু ‘ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি’র ব্যানারে যখন আলাদা সভা করেন, তখন একই দিনে নন্দীগ্রামেই আলাদা সভা করে তৃণমূল। সেই সভা থেকে শুভেন্দুর নাম করেই তাঁকে আক্রমণ করেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। আর নাম না করে শুভেন্দুর সমালোচনা করেছিলেন রাজ্যের অপর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তার পাল্টা আবার মুখ খুলেছিলেন দলের সাংসদ তথা শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশই আরও ঘোরালো হচ্ছিল।

এর মধ্যেই কাঁথির অধিকারী বাড়িতে গিয়েছিলেন ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোর। তাঁর একপ্রস্ত আলোচনা হয় শুভেন্দুর বাবা তথা দলের বর্ষীয়ান নেতা-সাংসদ শিশির অধিকারীর সঙ্গে। সূত্রের খবর, প্রশান্ত কথা বলতে চেয়েছিলেন শুভেন্দুর সঙ্গে। কিন্তু তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন না। কথা না-হলেও প্রশান্তের ওই সফর মারফত শুভেন্দুর কাছে ‘ইতিবাচক সঙ্কেত’ পাঠানো হয়েছিল বলেই তৃণমূল সূত্রের দাবি।

Advertisement

আরও পড়ুন: সিবিআই জেরার পর গরু পাচার-কাণ্ডে গ্রেফতার বিএসএফ কমান্ডান্ট সতীশ কুমার

কিন্তু ওই ঘটনার পর আবার প্রকাশ্যে শুভেন্দুকে রাজনৈতিক আক্রমণ করেন দলের প্রথম সারির সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পর পর দু’টি সভায় তিনি শুভেন্দুর ‘বডি ল্যাঙ্গোয়েজ’ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয় বলেই শুভেন্দু-অনুগামীদের বক্তব্য।

তবে ঘটনাপ্রবাহ বলছে, তার পরেও তৃণমূল নেতৃত্ব হাল ছাড়েননি। সূত্রের খবর, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনায় বসে তাঁর বক্তব্য শোনা হোক। সেই মতোই দু’দফায় শুভেন্দুর সঙ্গে দলের প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে কয়েক জন নিভৃতে আলোচনায় বসেছেন। সেই আলোচনার পর্ব শেষ হয়ে যায়নি বলেই জানাচ্ছেন দলের নেতাদের একাংশ।

আরও পড়ুন: রাজ্যে ৪ লাখ ছাড়াল মোট সুস্থের সংখ্যা, সুস্থতার হার ৯২ শতাংশ

তবে শুভেন্দু নিজে তাঁর অবস্থান এখনও স্পষ্ট করেননি। যদিও তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন, কালীপুজোর পর তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঘোষণা করতে পারেন। ফলে রাজ্য রাজনীতিতে তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা তৈরি হয়েছে। বস্তুত, আপাতত রাজ্যের রাজনীতিতে একটিই কৌতূহল— শুভেন্দু কি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাচ্ছেন।

তবে শুভেন্দু তাঁর অবস্থান এখনও পর্যন্ত খোলসা করেননি। তিনি বিজেপি-তে যাচ্ছেন, এটা যেমন শুভেন্দু কখনও বলেননি। তেমনই তিনি যে যাচ্ছেন না, স্পষ্ট করে বলেননি তা-ও। ফলে তৃণমূলের ভিতরে-বাইরে শুভেন্দুকে নিয়ে বিভ্রান্তি ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে শুভেন্দু-বিরোধী তৃণমূল নেতা অখিল গিরি জানিয়েছেন, দল শুভেন্দুকে সাত দিনের ‘চরমসীমা’ দিয়েছে। তার মধ্যেই তাঁকে তাঁর সিদ্ধান্ত জানিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। প্রসঙ্গত, তার অব্যবহিত আগেই শুভেন্দু ঘোষণা করেন, তিনি অখিলের বিধানসভা কেন্দ্র রামনগরে আগামী বৃহস্পতিবার ১৯ নভেম্বর ‘মেগা-শো’ করবেন।

আরও পড়ুন: ‘এই দল আর আমার নয়’, জল্পনা বাড়ালেন তৃণমূল বিধায়ক মিহির

এই পরিস্থিতিতেই নেত্রীর নির্দেশে দলের এক প্রবীণ সাংসদ শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন। মঙ্গলবার তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা জানান, ওই সাংসদ কয়েকদিনের মধ্যেই আবার শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘ও কী চাইছে, কোথায় সমস্যা, সেটাই বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যা মেটে। আমাদের বিশ্বাস, এই সমস্যাও মিটে যাবে। শুভেন্দু তো এখনও পর্যন্ত দলের বিরুদ্ধে বা নেত্রীর বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও কথা বলেনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement