যন্তর মন্তরে তৃণমূলের মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)।
বিজেপি সরকার ‘হীরক রাজা’। যন্তর মন্তরের মঞ্চে অভিষেকের স্লোগান, ‘‘দড়ি ধরে মারো টান, জমিদার হবে খান খান।’’
অভিষেক বললেন, ‘‘আজ আন্দোলনের শেষ নয়। আজ থেকে আন্দোলনের শুরু। আর কেন্দ্রের কাছ থেকে আমরা সুদসমেত টাকা ফেরত নেব।’’
‘‘কেন্দ্র যদি বাংলার দাবি না মানে, তবে আবার দিল্লির বুকে সভা করবে তৃণমূল। তবে এর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক লক্ষ মানুষকে নিতে দিল্লিতে আসব’’, বললেন অভিষেক।
কেন্দ্র টাকা না দিলে আড়াই হাজার জব কার্ড হোল্ডারের প্রাপ্য টাকা দরকার হলে বাংলার জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের বেতন দিয়ে মেটাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন অভিষেক। জানালেন দু’মাসের মধ্যে এই ব্যবস্থা করবেন বাংলার ৭০ হাজার জনপ্রতিনিধি। নিজেদের এক মাসের বেতন এই জব কার্ড হোল্ডারদের দেবে তৃণমূল।
অভিষেক বললেন, ‘‘কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতি মন্ত্রী তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় সময় দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সেই সময় বদলে দেওয়া হয়। চিঠি দিয়ে জানানো হয় মন্ত্রী থাকবেন না। তাঁর বিমান ৫টায় নামবে। তাই সন্ধ্যা ৬টায় দেখা করবেন তিনি তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। অথচ খবর পাচ্ছি, উনি বিকেল ৪টেয় সময় দিয়েছেন শুভেন্দুকে। তা হলে বুঝুন, ভুক্তভোগী মানুষের জন্য মন্ত্রীর কাছে সময় নেই, শুভেন্দুর জন্য সময় আছে। ’’
‘‘মানুষ ওদের ক্ষমতায় এনেছে। যা খুশি তাই করছে। রিমোট কন্ট্রোলের বোতাম টিপে আপনাদের অধিকার ছিনিয়েছে ওরা। কিন্তু মনে রাখবেন, ওদের হাতে বোতাম থাকলে আপনাদের হাতেও ইভিএমের বোতাম আছে। আপনারাও এর জবাব দেবেন সেই বোতাম টিপে।’’ বললেন অভিষেক।
‘‘ওরা আমাদের সভা আটকাতে সমস্ত নিরাপত্তা বাহিনীকে নামিয়ে দিয়েছে দিল্লিতে। এ দিকে মণিপুর জ্বলছে।’’ বললেন অভিষেক।
লোকসভায় তৃণমূল দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোকাবিলা করতে গিরিরাজ সিং বিহার থেকে, অনুরাগ ঠাকুর ওড়িশা থেকে, সুকান্ত মজুমদার দিল্লি থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন। এখনও তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাকি! গত কাল রাতে আমার সঙ্গে দিদির কথা হয়েছে। আমি তাঁকে বলেছি, অভিষেক এখন পরিণত রাজনৈতিক নেতা।’’
রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘দেখলাম, অনেকে বলছেন দিল্লিতে ভূমিকম্প হয়েছে। ওটা আসলে ভূমিকম্প নয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য মোদী-শাহের মনের কম্পন। ওঁরা ভেবেছিল, ট্রেন বাতিল করে, বিমান বাতিল করে তৃণমূলকে আটকাবে। কিন্তু অভিষেক বাঘের বাচ্চা, কর্মসূচি করে দেখিয়ে দিয়েছে।’’
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বললেন, ‘‘অভিষেক লড়াই করো, আমরা সঙ্গে আছি।’’
ফিরহাদ বললেন, “১২ বছর আগের ইতিহাস মনে পড়ছে আমার। ১২ বছর আগেও বাংলার পুলিশ আমাদের দেখলে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসত। আর এখন অমিত শাহের পুলিশ লাঠি নিয়ে তাড়া করছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যখন নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তখন ওই পুলিশই আমাদের স্যালুট ঠুকেছিল। আমার বিশ্বাস, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব দিল্লিতে বদল আনবে। তার পর এই দিল্লি পুলিশকেই আমাদের স্যালুট করতে হবে। সে দিন আর বেশি আর দূরে নেই। আজ না হলে কাল হবেই। ’’
ব্রাত্য বললেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন প্রথম জনপ্রতিনিধি হয়েছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জনপ্রতিনিধি হওয়ার কথা ভেবেছিলেন বলে আমার মনে হয় না।’’ একই সঙ্গে জানালেন, ‘‘বাংলার আগের সরকার দিল্লিতে এসে এমন ভাবে প্রতিবাদ জানাতে পারেনি।’’
মঞ্চে বক্তৃতা দিলেন, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। কল্যাণ বললেন, ‘‘বিজেপি হাই কোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছ আবেদন করে ৩২ হাজার জনের চাকরি খেয়েছিল। আমরা তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি।’’ কল্যাণ যন্তর মন্তরের মঞ্চ থেকে বলেন, “যেখানে যেখানে বিজেপি নেতারা যাবেন, বাংলার মানুষ, আপনারা তাদের আটকে রাখুন বাংলাকে বঞ্চনা করার জন্য।’’
মঞ্চে বলছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের প্রবীণ নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। মন্ত্রী বললেন, ‘‘ভারতের যে নেতা এখন বিশ্বনেতা হওয়ার নেতা স্বপ্ন দেখছেন, সেই মানুষটি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার জন্য পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ করে দিয়েছেন দিল্লির যন্তর মন্তর এলাকা। এখানে বাংলা থেকে যত জন মানুষ এসেছেন, তত পুলিশ এসেছে। এটা দেখে আমার গর্ব হচ্ছে।’’
যন্তর মন্তরের মঞ্চে গান গাইছেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।