TMC

TMC: আগামী ছ’মাসে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল! অভিষেকের ছবি দিয়ে শহরে হোর্ডিং ঘিরে জল্পনা

কোনও দলীয় ঘোষণা নয়। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ বড় বড় হোর্ডিংয়ের এই লেখা ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২২ ০৯:০০
Share:

রাসবিহারী মোড়ে ‘নতুন তৃণমূলের’ পোস্টার। নিজস্ব চিত্র।

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির দিনে কলকাতা জানতে পারল ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল।’ জানানো হল, সেই তৃণমূল হবে, ‘ঠিক যেমন সাধারণ মানুষ চায়।’

Advertisement

এটি কোনও দলীয় ঘোষণা নয়। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি-সহ বড় বড় হোর্ডিংয়ের এই লেখা ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ কলকাতা জুড়ে। প্রচারের দায়িত্ব স্বীকার করেছে ‘আশ্রিতা’ ও ‘কলরব’ নামে দু’টি সামাজিক সংগঠন। যার সভাপতি কালীঘাট-রাসবিহারী অঞ্চলের তৃণমূল নেতা কুমার সাহা। স্বাভাবিক কারণে এই হোর্ডিং রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।

তৃণমূল বিষয়টিকে ‘অর্থহীন’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছে। তবে আদতে এটি শাসকের ‘মুখ বদল’-এর সূচনা বলেই মনে করছে বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস। এমনকি, মহারাষ্ট্রের মতো এই রাজ্যেও শাসক দলে ভাঙন ধরানোর জন্য বিজেপি ‘শিন্ডে-ছক’ করছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছে সিপিএম ও কংগ্রেস।

Advertisement

‘ছয় মাসের মধ্যে নতুন তৃণমূল’-এর কথা অভিষেক নিজমুখে বলেছেন মাসখানেক আগে। আলিপুরদুয়ারে একটি দলীয় সমাবেশে তিনি দলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়ে এই ঘোষণা করেছিলেন। তখনও পার্থ-কাণ্ড, অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতার কিছুই সামনে আসেনি। ফলে অভিষেকের ওই ঘোষণাকে সেই সময় দলের ভিতরের ‘সংস্কারের উদ্যোগ’ হিসাবে দেখা হয়েছিল। তার পরেই পরিস্থিতি যে দিকে গড়াল তাতে, মন্ত্রিসভায় এবং দলে বড় রদবদলের প্রক্রিয়া অনিবার্য হয়ে ওঠে। দেখা যায়, সেই রদবদলে নতুন মুখদের সিংহভাগই অভিষেকের ঘনিষ্ঠ অথবা পছন্দের।

প্রাক্-স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যেই অনুব্রতের পক্ষ নিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। কেন্দ্রের ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’র বিরুদ্ধে নিজের দলকে তিনি পথে নামারও নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার ‘খেলা হবে দিবস’ থেকে এই কর্মসূচির শুরু হয়। এ দিনও কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তৃণমূল কর্মীরা মিছিল, প্রতিবাদ সভা করেন।

তবে ঠিক তার আগেই মমতার খাসতালুক দক্ষিণ কলকাতায় অভিষেকের আঙুল তোলা ছবি দিয়ে ‘নতুন তৃণমূল’-এর ঘোষণা সম্বলিত হোর্ডিং সমগ্র পরিস্থিতিতে তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রা যোগ করল। এর আগে ২০১৬ সালেও একবার মমতার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার শপথের দিনে অভিষেকের ছবি-সহ ‘ম্যাচ উইনার’ লেখা প্ল্যাকার্ড ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই সঙ্গেই যুক্ত হয়েছিল রেড রোডের ওই শপথ অনুষ্ঠানে অভিষেকের অনুপস্থিতি। পরে অবশ্য অতি দ্রুত সেই সব প্ল্যাকার্ড খুলে ফেলা হয়। এ বারের হোর্ডিংগুলি মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেও ঝুলতে দেখা গিয়েছে। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘ওই হোর্ডিং তো দলের নয়। উৎসাহী কেউ করে থাকতে পারেন। অভিষেকের বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃতি নেওয়া হয়েছে। কাউকে তুলে ধরার কথা অর্থহীন। মমতাদির নেতৃত্বে, অভিষেকের সেনাপতিত্বে তৃণমূল কংগ্রেস চলছে।’’

হোর্ডিং যে দুই সংগঠনের নামে তার সভাপতি কুমার সাহা বলেন, ‘‘অভিষেককে আলাদা ভাবে নেতা হিসাবে তুলে ধরার কোনও প্রয়োজন নেই। তিনি নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। আমরা তাঁকে ভালবাসি। তিনি দলে স্বচ্ছতার কথা বলেছেন তাই পোস্টার দিয়েছি। এ বার ১০০টি হোর্ডিং দিয়েছি। আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়েও আমরা পোস্টার দিয়েছি।’’

রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর খাসতালুকে এমন পোস্টার কিসের ইঙ্গিত? তা হলে কি প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক চক্রান্ত? ২৯৪টি কেন্দ্রে তো মমতাই মুখ ছিলেন। তা হলে কি তৃণমূলের মুখ বদলের সময় আসন্ন?’’ ২০০১ সালে জ্যোতি বসুকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে ‘নতুন মুখ’ হিসাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বসিয়েছিল সিপিএম। সেই প্রসঙ্গ টেনে শমীকের মন্তব্য, ‘‘বুদ্ধদেববাবুর মতো গ্ল্যামার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেই। দু’টো পরিস্থিতিকে এক করলে চলবে না। দু’টো প্রেক্ষিত ভিন্ন।’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও মনে করেন, ‘‘জ্যোতিবাবুকে সরিয়ে বুদ্ধবাবুকে এনে যে ভাবে পরিবর্তনের ডাক আটকে দিয়েছিল এখন তার পুনরাবৃত্তি সম্ভব নয়।’’ তাঁর কথা, ‘‘গোটা তৃণমূল বিপাকে পড়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তিতেও বড়সড় ধাক্কা লেগেছে। এখন ভাইপো দেখাতে চাইছেন, ‘জ়িরো টলারেন্স’-এর কথা বলে তিনি ‘রিফর্ম’ করবেন। কিন্তু দলটাই যেখানে ‘ডিফর্ম’ হয়ে গিয়েছে, সেখানে আর ‘রিফর্ম’ কাজ করবে না!’’

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘বাংলায় বিজেপি যে এক জন ‘একনাথ শিন্ডে’র খোঁজ করছে, এই হোর্ডিং কি তারই ইঙ্গিত?’’ তাঁর মতে, ‘‘পিসি আর ভাইপো মিলেই তো সব কিছু! আলাদা হলেই বা আর কী হবে? নতুন বোতলে সেই পুরনো মদ আসবে!’’

পর্যবেক্ষকদের অনেকের ধারণা, অভিষেকের বক্তব্যের মূল জায়গাটি এখনও পর্যন্ত সাংগঠনিক ‘কর্তৃত্ব’ হাতে নেওয়া। ছয় মাসের সময়সীমা বলার অর্থ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই কাজ ‘সম্পন্ন’ করা। তাতে সংগঠনের মাধ্যমে প্রশাসনিক ক্ষমতার নাগাল পাওয়াও সহজ হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement