ফাইল চিত্র
কলেজের গেটের সামনেই শিক্ষককে ঘিরে ধরে তড়পাচ্ছিল টি-শার্ট পরা কয়েক জন তরুণ। চোখের পলক ফেলার আগেই তাদের এক জন ঘুষি মারতে শুরু করল শিক্ষককে। তার বাঁ হাত চেপে বসেছে শিক্ষকের শার্টের কলারে। আতঙ্কে চিৎকার করছেন ছাত্রীরা। শিক্ষককে বাঁচাতে ছুটে এলেন কয়েক জন। মার খেয়ে কলেজের গেটে পিঠ ঠেকিয়ে মাটিতে বসে পড়লেন মাঝবয়সি শিক্ষক।
বুধবার বিকেল ৪টে নাগাদ কোন্নগরের হীরালাল পাল কলেজের এই ঘটনা যুক্ত হল রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-নিগ্রহের কলঙ্কের তালিকায়। শিক্ষকের নাম সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, নিগ্রহকারীরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। সন্ধ্যায় তিনি উত্তরপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, এক হামলাকারীর নাম সন্দীপ পাল। সে গা-ঢাকা দিয়েছে।
এর প্রতিবাদে সরব হয়েছে ছাত্র-শিক্ষক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক কেশব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই গুন্ডামির বিচার চাই।’’ সিপিএম নেতা, অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক সুদর্শন রায়চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই ঘটনায় শিউরে উঠেছি।’’
কী বলছে টিএমসিপি?
টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই ভাবে শিক্ষককে যে-ই আক্রমণ করে থাকুক, তা অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ। ভিডিয়োয় যাকে হামলা করতে দেখা গিয়েছে, তাকে চিনি না। কিন্তু সেখানে দেখা যাচ্ছে, আমাদের সংসদের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমি নিজে তদন্ত করছি। আমাদের সংগঠনের কেউ জড়িত থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
মার খেয়ে কলেজের গেটে পিঠ ঠেকিয়ে মাটিতে বসে পড়লেন মাঝবয়সি শিক্ষক।
কেন নিজের কলেজের গেটেই মার খেতে হল শিক্ষককে?
কলেজ সূত্রের খবর, এখানে স্নাতকোত্তর স্তরের পঠনপাঠন চলে। এ দিন চতুর্থ সেমেস্টারের শেষ পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে বেলা সওয়া ২টো নাগাদ কিছু ছাত্রী বেঞ্চে বসে মোবাইলে ছবি তুলছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, সেই সময় স্নাতক স্তরের ছাত্রী এক টিএমসিপি নেত্রী এসে তাঁদের ‘তুই-তোকারি’ করতে থাকে। পরে আর কয়েক জন ছেলেমেয়েকে এনে তাঁদের গালিগালাজ করা হয়। এ নিয়ে দু’পক্ষে বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, ওই সময়ে টিএমসিপির সমর্থকেরা এমএ ক্লাসের ওই ছাত্রীদের আটকে রাখে। এর পরে শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় ঠিক হয়, দু’পক্ষই দুঃখ প্রকাশ করে পরস্পরের কাছে ক্ষমা চাইবে। এমএ-পড়ুয়া অনিন্দিতা কোলে, অমৃতা চট্টোপাধ্যায়দের অভিযোগ, বিষয়টি মিটে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে তাঁদের সবাইকে তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে জয়ধ্বনি দিতে বলা হয়। কিন্তু তাঁরা তা বলতে অস্বীকার করেন। অমৃতা বলেন, ‘‘তখন আমাদের এক বান্ধবীকে ওদের একটি মেয়ে চড় মারে। আমাদের ঘরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়।’’
বেশ কিছু ক্ষণ ওই পরিস্থিতি চলার পরে কলেজের বাংলার বিভাগের প্রধান সুব্রতবাবু-সহ কয়েক জন শিক্ষক ফের বিষয়টি মিটিয়ে দেন। এর পরে কলেজ থেকে বাইরে বেরোতেই কিছু ছেলে সুব্রতবাবুর উপরে চড়াও হয়। কয়েক জন তাঁকে বাঁচান।
এই ঘটনার পরে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ছাত্র-শিক্ষকেরা দল বেঁধে উত্তরপাড়া থানায় যান। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘পঁচিশ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। এমন অসম্মানিত কোনও দিন হইনি। টিএমসিপির ওই ছেলেমেয়েরা আমাকে পছন্দ করে না। কটু কথা বলে। কিন্তু রাস্তায় ফেলে ঘুষি মারবে, এটা কল্পনারও অতীত ছিল।’’ মলয় রায় নামে অন্য এক শিক্ষকের খেদ, ‘‘আমরা গোলমাল থামাতে মধ্যস্থতা করেছিলাম। তারই পুরস্কার জুটল!’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।