মোহন ভাগবত। —ফাইল চিত্র।
সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত কলকাতার কেশব ভবনে থাকাকালীন কি সেখানে তৃণমূলের বিক্ষোভ হয়েছিল? সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট গেল অমিত শাহের শাসনাধীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। মঙ্গলবার রাতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের শীর্ষনেতাদের নয়াদিল্লির কৃষি ভবন থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির মুখার্জিনগর থানায়। সেই খবর ছড়িয়ে পড়ায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছিল তৃণমূলের বিক্ষোভ।
ঘটনাচক্রে, ওই দিন রাতে উত্তর কলকাতায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) দফতর কেশব ভবনে ছিলেন সঙ্ঘপ্রধান ভাগবত। অভিষেক-সহ তৃণমূল নেতৃত্বের ‘হেনস্থা’র প্রতিবাদে স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা কেশব ভবনের সামনে জড়ো হন। দিল্লিতে নেতাদের হেনস্থা ও আটক করার প্রতিবাদে শুরু হয় বিক্ষোভ। দ্রুত স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিক্ষোভরত তৃণমূল কর্মীদের। খবর পৌঁছয় কলকাতায় কর্মরত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকদের কাছে। বিষয়টি দ্রুত জানানো হয় দিল্লির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত ওই বিষয়ে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেয় দিল্লি। সেই নির্দেশে বলা হয়, ওই রাতেই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। সেই মর্মে রাতেই কয়েক জন গোয়েন্দা আধিকারিককে পাঠানো হয় কেশব ভবনে। সেখানে গিয়ে তাঁরা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অবগত হন। গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, কেশব ভবনের দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে যেমন কথা হয়, তেমনই ঘটনা প্রসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানতে রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকদের। এর পর দ্রুত বিষয়টি ফোনেই দিল্লিকে জানানো হয়। রাজধানীতে কর্মরত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক নির্দেশ দেন, ওই বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টও পাঠাতে হবে। নির্দেশ পাওয়ামাত্র রাতে বাড়িতেই কাজ শুরু করেন কলকাতার আধিকারিকেরা। গভীর রাতে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে দিল্লিতে পাঠানো হয়। দিল্লিতে কর্মরত আধিকারিকরা রাতেই সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখেন বলেই গোয়েন্দা সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মপদ্ধতি অনুযায়ী আপৎকালীন কোনও পরিস্থিতি ছাড়া কোনও রাজ্যে রাতের দিকে কোনও ঘটনা ঘটলে পর দিন সকালে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের গোয়েন্দা দফতরের অফিস খোলার পর রিপোর্ট তৈরি করে দিল্লিতে পাঠানো হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনও অপেক্ষা করতে চায়নি দিল্লি। আরএসএস প্রধান কেশব ভবনে থাকাকালীন সেখানে কী কী ঘটনা ঘটেছিল, তা রাতেই জানতে চাওয়া হয়েছিল। তবে ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে কোনও পদক্ষেপ করা হবে কিনা সে বিষয়ে কলকাতার বিভাগকে কিছু জানানো হয়নি। প্রসঙ্গত, যে কয়েক জন ‘ভিভিআইপি’র নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সর্বদা সজাগ, তাঁদের এক জন হলেন ভাগবত। গোয়েন্দা সূত্রের মতে, ভাগবতের নিরাপত্তাজনিত কোনও সমস্যা ওই দিন দেখা দিয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে রাতেই ওই রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল।