খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে বর্ধমান-কালনা রোড অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ —প্রতীকী চিত্র।
প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলরের অনুগামী ও তাঁদের ‘বিরোধী গোষ্ঠী’র বলে পরিচিত লোকজনের মধ্যে গোলমাল চলছিল সোমবার থেকে। তারই জেরে মার খেয়ে মঙ্গলবার এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল বর্ধমান শহরে। নিহত অশোক মাঝি (৩৮) বর্ধমান পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সৈয়দ মহম্মদ সেলিমের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে এলাকায় পরিচিত। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ঘটনাটিকে দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বলে মানতে চাননি।
ঘটনার প্রতিবাদে ও খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন সন্ধ্যায় বর্ধমান-কালনা রোড অবরোধ করেন তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। নিহতের পরিবার বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের বিরুদ্ধে ‘চক্রান্তের’ অভিযোগ তুলেছে। যদিও খোকনবাবু এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর যোগের কথা মানতে চাননি। জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যত দূর জেনেছি, পাড়াগত বিবাদের জেরে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রের দাবি, সোমবার থেকেই তৃণমূলের দু’টি ‘গোষ্ঠীর’ সংঘর্ষে তপ্ত ছিল ৬ নম্বর ওয়ার্ডের খালাসিপাড়া। তার রেশ চলে মঙ্গলবারও। এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ প্রাক্তন কাউন্সিলর সেলিমের উপরে লাঠি, টাঙি নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে এলাকায় ‘বিরোধী গোষ্ঠী’র নেতা বলে পরিচিত শিবশঙ্কর ঘোষের লোকজনের বিরুদ্ধে। সেলিমের অভিযোগ, ‘‘শিবশঙ্করের কিছু লোক রড নিয়ে হামলা করে। আমাকে খুনের চক্রান্ত হয়েছিল।’’ বেশ কিছু দোকানে ভাঙচুরও করা হয় বলে অভিযোগ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় তৃণমূল কর্মী অশোক ও তাঁর স্ত্রী চন্দনা। অভিযোগ, তাঁদের উপরে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে হামলাকারীরা। দম্পতি মাথায় চোট পান। আহত অবস্থায় তিন জনকেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেলিম ও চন্দনাকে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে মৃত্যু হয় অশোকের।
চন্দনার অভিযোগ, ‘‘বিধায়কের চক্রান্তে এই ঘটনা ঘটেছে। আমার স্বামীকে ওরা খুন করেছে। এর বিচার চাই।’’ মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সেলিম-গোষ্ঠীর লোকজন রাস্তা অবরোধ করেন। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সেলিমের অভিযোগ, ‘‘গোটা ঘটনা ঘটিয়েছে খোকন-ঘনিষ্ঠ শিবশঙ্করের লোকজন।’’ যদিও খোকনবাবুর দাবি, ‘‘ওরা (সেলিম গোষ্ঠী) নিজেরাই ঝামেলা করেছে। আমার সঙ্গে ঘটনার কোনও যোগ নেই।’’ শিবশঙ্করের বক্তব্য, ‘‘পারিবারিক বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। আমাকে অন্যায় ভাবে জড়ানো হচ্ছে।’’ পুলিশ জানায়, রাত পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।