উল্লাস: জয়ের আনন্দে নাচ নোয়াপাড়া বিধানসভার বিধায়ক সুনীল সিংহের। বৃহস্পতিবার গাড়ুলিয়া পুরসভার সামনে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
সাম্প্রতিক নির্বাচনের চলতি ধারাই বজায় থাকল রাজ্যে জোড়া উপনির্বাচনে। বিরোধীদের দুরমুশ করে জিতল শাসক দল! বিরোধী হিসাবে বামেদের তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়ে দ্বিতীয় হিসাবে উঠে এল সেই বিজেপি। এবং রাজস্থানে শাসক বিজেপি-কে হারিয়ে দু’টি লোকসভা ও একটি বিধানসভা আসন দখল করলেও এখানে কংগ্রেস তলিয়ে গেল চতুর্থ স্থানে!
কংগ্রেসের হাত থেকে এ বার নোয়াপাড়া বিধানসভা আসন পুনরুদ্ধার করল তৃণমূল। তাদের প্রার্থী সুনীল সিংহের জয়ের ব্যবধান ৬৩ হাজার ১৮। ভোটপ্রাপ্তির হার ৫৩.৫১%। আর উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্র তৃণমূল নিজের দখলে রাখল ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার ২০১ ভোটে জিতে! ভোটপ্রাপ্তির হার ৬১%। উলুবেড়িয়ার প্রয়াত সাংসদ সুলতান আহমেদ গত বার জিতেছিলেন দু’লক্ষ ১ হাজার ভোটে। রাজনীতিতে নবাগতা তাঁর স্ত্রী সাজদা আহমেদ এক ধাক্কায় ব্যবধান দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছেন।
জোড়া উপনির্বাচনের ফল থেকে দু’টি প্রবণতা অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রথমত, তৃণমূল এখন এত বেশি ভোট পেয়ে জিতছে যে, বাকি বিরোধীদের ভোট এক জায়গায় আনলেও তাদের টপকানো সম্ভব নয়! এবং দ্বিতীয়ত, ধারাবাহিক ভাবে দ্বিতীয় স্থানে থাকছে বিজেপি। যদিও জয়ী তৃণমূলের থেকে দ্বিতীয় বিজেপি-র দূরত্ব বিস্তর! একমাত্র সবং বিধানসভায় তারা তৃতীয় হয়েছিল। তবে গেরুয়া শিবিরের ভোট সেখানে পৌঁছেছিল ১৮%-এ। আর এ বার নোয়াপাড়ায় বিজেপি-র সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ২০.১৬% এবং উলুবেড়িয়ায় অনুপম মল্লিক প্রায় ২৩% ভোট পেয়েছেন। উলুবেড়িয়ায় যেমন মেরুকরণের চেষ্টা বিজেপি-কে ফায়দা দিয়েছে, তেমনই নোয়াপাড়ায় উদ্বাস্তু ও হিন্দিভাষী এলাকায় তারা ভাল ভোট পেয়েছে।
জোড়া জয়ে স্বভাবতই খুশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা মানুষের জয়! মানুষের এত ভালবাসা, তাঁদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। চিরঋণী!’’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, মানুষের এই ভালবাসা তাঁকে কাজ করতে অনুপ্রেরণা জোগায়। মানুষের আর্শীবাদ, দোয়া-ই তাঁদের বড় ভরসা।
আরও পড়ুন: তিনটি আসনেই বিজেপিকে হারাল কংগ্রেস
বিরোধীরা অবশ্য প্রশ্ন তুলছে, মানুষের রায়ের উপরে ভরসা রাখার কোনও লক্ষণ এই উপনির্বাচনে ছিল কি? তাদের অভিযোগ, বুথ দখল করে ভোট লুঠের পরিণামে তৃণমূল এমন বিপুল জয় পাচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী দাবি করেছেন, রাজ্যে অন্তত একটা ভোট সুষ্ঠু ভাবে হতে দিয়ে যাচাই করা হোক কে কোথায় দাঁড়িয়ে! তাঁরা বলছেন, মানুষ অবাধে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন বলেই বিজেপি-শাসিত রাজস্থানে উপনির্বাচনে কংগ্রেস জিততে পেরেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, তা হলে বিজেপি বাড়ছে কী ভাবে? রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ বলছে, রাজনীতিতে বিরোধী পরিসর সব সময় থাকে। তৃণমূল-বিরোধী জনতার একটা বড় অংশ মনে করছে, কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি-র পক্ষেই তৃণমূলকে সবক শেখানো সম্ভব। তাই ‘দখলদারি’র ভোটেও সামান্য সুযোগে তাঁরা পদ্মফুলে ভোট দিচ্ছেন। আর কংগ্রেস ও সিপিএম নেতাদের দাবি, তাঁদের দিক থেকে কিছু ভোট বিজেপি-র দিকে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তৃণমূলের হয়ে যে বাহিনী বুথ দখল করছে, তারাই কিছু ভোট বিজেপি-র ঘরেও ফেলছে। তাই গুজরাত, রাজস্থানের মতো বিজেপি-প্রভাবিত রাজ্যে গেরুয়া দাপট কমলেও এ রাজ্যে বেড়ে যাচ্ছে!
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি আবার আলাদা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমের সঙ্গে দ্বিতীয়ের বিরাট ফারাকের কারণ ভোট লুঠ। বিরোধীরা বিজেপি-কে ভোট দিয়েছে। তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে সিপিএম।’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, সিপিএম বা কংগ্রেস নিজের ক্ষমতায় কিছু করতে পারবে না জেনে কর্মী-সমর্থকদের বলে দিচ্ছে বিজেপি-কে ভোট দিতে। আগামী দিনে তাঁরা এই নিয়ে আরও ‘সতর্ক’ থাকবেন।