ক্ষণে ক্ষণে রং বদল, চৌরঙ্গি বিজয় সবুজের

এ যেন টি-টোয়েন্টির টানটান উত্তেজনা! ক্ষণে ক্ষণে টক্করে কখন কী ভাবে যে রং বদলাবে, কেউ জানে না। সাতসকালে শুরুটা মন্দ হয়নি শাসক দলের। কিন্তু তিন নম্বর রাউন্ড থেকেই কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবে উঠে আসতে শুরু করে কংগ্রেস। মঙ্গলবার, সকাল ১০টা। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে ভোটগণনার সময়ে ১৪৪ ধারা জারি করা ছিল সংলগ্ন এলাকায়।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৮
Share:

চৌরঙ্গিতে জয়ের পরে নাচ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

এ যেন টি-টোয়েন্টির টানটান উত্তেজনা! ক্ষণে ক্ষণে টক্করে কখন কী ভাবে যে রং বদলাবে, কেউ জানে না।

Advertisement

সাতসকালে শুরুটা মন্দ হয়নি শাসক দলের। কিন্তু তিন নম্বর রাউন্ড থেকেই কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবে উঠে আসতে শুরু করে কংগ্রেস।

মঙ্গলবার, সকাল ১০টা। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে ভোটগণনার সময়ে ১৪৪ ধারা জারি করা ছিল সংলগ্ন এলাকায়। বাইরে শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তির নীচে কাছাকাছিই ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি-র কিছু সমর্থক। জয়ের গন্ধে সকাল সকাল হাজির হলেও গণনার মাঝপর্ব পর্যন্ত পতাকা গুটিয়ে ব্যাজার মুখেই বসে ছিলেন তাঁরা। কংগ্রেসের লোকজন তেমন দেখা যাচ্ছিল না। তবে কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠকের কয়েক জন অনুগামী মাঝেমধ্যে গণনা কক্ষ থেকে বাইরে আসছিলেন। এবং তখন তাঁদের শরীরী ভাষা বেশ ফুরফুরে।

Advertisement

কংগ্রেসের এই সন্তোষ অবশ্য বেশি ক্ষণ স্থায়ী হল না। গোড়ায় বড়বাজার এলাকার ভোট গোনার সময়ে তারা এগিয়ে থাকলেও বৌবাজার এলাকার ইভিএমের ‘সিল’ খুলতেই ছবিটা পাল্টে গেল। প্রতি রাউন্ডের শেষে সংবাদমাধ্যমের জন্য ফলাফলের অগ্রগতি ঘোষণা করা হচ্ছিল মাইকে। অষ্টম রাউন্ডের পরে তৃণমূল-সমর্থকেরা উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ালেন। কংগ্রেসের পিছু হটার সেই শুরু। দশম রাউন্ডের শেষে দেখা গেল, তাদের পিছনে ফেলে দু’নম্বরে বিজেপি প্রার্থী রীতেশ তিওয়ারি।

বিজেপি-সমর্থকেরাও খানিকটা আশার আলো দেখছিলেন। কিন্তু শেষের দিকে রিপন স্ট্রিট লাগোয়া এলাকার গণনা চলাকালীনই রাজ্যের শাসক দল তাদের অনেকটা পিছনে ফেলে দিল। বসিরহাটে জয়ের খবরে বিজেপি শিবির কিছুটা চাঙ্গা হয়েছিল। চৌরঙ্গির শেষ রাউন্ডে কিন্তু কোনও ওস্তাদের মার দেখা গেল না। স্লগ ওভারে ব্যাটে ঝড় তুলে প্রতিপক্ষকে দাঁত ফোটানোর সুযোগ দিল না তৃণমূল। ষোলো রাউন্ড গণনার শেষে ফল: তৃণমূল ৩৮,৩২৮। বিজেপি ২৩,৯৮৪। কংগ্রেস ২৩,৩১৭ ভোট।

শেষের দিকে তিন-চার রাউন্ড গণনা বাকি থাকতেই অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল জোড়া ফুলের ছাপ দেওয়া পতাকাধারীদের দৌড়োদৌড়ি। সবুজ আবির মাখা যুববাহিনী সাঁ সাঁ করে মোটরবাইক ছোটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল একটু বাদেই। যুদ্ধ শেষ হতে ইডেন গার্ডেন্স থেকে বাবুঘাট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ চত্বর সরগরম হয়ে উঠল শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের উল্লাসে। রাজপথের রংটাও তখন সবুজে সবুজ।


মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি হাতে নবান্নে নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ আচার্য

চৌরঙ্গি জয়ের অন্যতম প্রধান চরিত্রও ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছেন। ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা রিপন স্ট্রিট অঞ্চলের দাপুটে তৃণমূল নেতা ইকবাল আহমেদকে দেখেই কাঁধে তুলে নিলেন অনুগামীরা। তৃণমূল প্রার্থী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় আর ইকবালের রসায়ন নিয়ে কিছু সংশয় এত দিন মাথাচাড়া দিচ্ছিল। ভোটের দিনেও বুথে বুথে সিআরপি-র তৎপরতা দেখে মেজাজ হারাচ্ছিলেন ইকবাল। গণনায় দেখা গেল, তাঁর এলাকাই (৬২ নম্বর ওয়ার্ড) পাঁচ হাজার ভোটের লিড দিল নয়নাকে। ৩৮টা বুথেই এগিয়ে তৃণমূল।

ইকবাল শুধু বললেন, “মোদী-হাওয়া এখন হাওয়া! এর নাম ইকবাল-ম্যাজিক।” বেলা ১২টা নাগাদ জয়ের শংসাপত্র নিতে এসে নয়নাও হেসে ডেকে নিলেন ইকবালকে। “মানুষ আমাকে নয়, দিদিকে ভোট দিয়েছেন,” বলতে বলতেই নয়নার ঢাউস গাড়ি নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল। ইকবালকে নিয়েই তখন মাতোয়ারা গোটা তল্লাট। সমর্থকদের কাঁধে চড়ে ইকবাল বললেন, “দিদি যাকে দাঁড় করাবেন, তাকেই জেতাব! একটা খুঁটি দাঁড়ালেও ঠিক জিতত!”

বিরোধী শিবিরের কর্মী-সমর্থকেরা কেউ তখন ত্রিসীমানায় নেই। টক্করে আগাগোড়া নিষ্প্রভ সিপিএমের অস্তিত্ব গণনা কেন্দ্রের বাইরে কার্যত বোঝাই যায়নি। বাম প্রার্থী ফৈয়াজ আহমেদ পেয়েছেন সাকুল্যে ৮৮৯০টি ভোট। চৌরঙ্গির ভোটযুদ্ধে চতুর্থ সিপিএম প্রথম রাউন্ড থেকেই কখনওই মাথা তুুলতে পারেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement