গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বাগদা উপনির্বাচনে জিততে মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই এই উপনির্বাচনের লড়াইয়ে ‘কৌশলগত’ বদল আনছে বাংলার শাসকদল। প্রার্থীচয়ন থেকে শুরু করে প্রচার কৌশল— লোকসভা ভোটের তুলনায় সবকিছুতেই বদল এনে মতুয়াগড়ে ঘাসের ওপর জোড়াফুল ফোটাতে চাইছেন তৃণমূল নেতারা। লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির শোচনীয় ফল হলেও বনগাঁ লোকসভায় ফের জিতেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ওই আসনে ৭৫ হাজার ৮৫২ ভোটে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন। তার মধ্যে বাগদা বিধানসভায় ২০ হাজার ৬১৪ ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। উপনির্বাচনে সেই ব্যবধান টপকে জয়ের জন্য লড়ছে তৃণমূল।
বনগাঁ লোকসভার ফলাফল বিশ্লেষণ করে তৃণমূল দেখেছে, ওই এলাকার ভোটারদের মধ্যে বনগাঁর ঠাকুরবাড়ির প্রভাব যথেষ্ট। যে কারণে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছ’টিতেই পরাজিত হয়েছেন। তাই এ বারের উপনির্বাচনে প্রয়াত বীণাপাণি দেবীর নাতনি এবং প্রয়াত তৃণমূল সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের ছোট মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুরকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটে শান্তনুর প্রার্থী হওয়ার যে ‘সুবিধা’ বিজেপি পেয়েছিল, উপনির্বাচনে সেই লাভ আপাতত তাদের অনুকূলে থাকবে বলেই দাবি তৃণমূলের। কারণ, এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বিনয় কুমার বিশ্বাস মতুয়া হলেও ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। এ ছাড়াও লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের গৌরাদিত্য বিশ্বাস ও কংগ্রেসের অশোক কুমার হালদার। তবে মূল লড়াই বিনয় বনাম মধুপর্ণার।
শুধু প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রেই যে তৃণমূল ‘কৌশলী’ চাল দিয়েছে, তা নয়। প্রচারের ক্ষেত্রেও কৌশল বদলে ফেলেছে তারা। এই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক, বিধানসভার মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী এবং মন্ত্রী সুজিত বসুকে। এ ক্ষেত্রে ঠিক হয়েছে, প্রার্থীকে নিয়ে বা আলাদা করে কোনও বড় সভা-সমাবেশ, মিছিল বা রোড শো হবে না। বরং ছোট-ছোট ঘরোয়া বৈঠকের ওপর জোর দেওয়া হবে। বড় নেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচার করবেন। কোনও অভাব-অভিযোগ থাকলে তা-ও জানার চেষ্টা করবেন। এমনকি, প্রচারের ক্ষেত্রে পথসভাও করা হচ্ছে না। বরং সন্ধ্যায় ছোট ছোট মিটিং করা হচ্ছে। যেখানে ২০০-২৫০ জন কর্মীকে শামিল হতে বলা হয়েছে। প্রার্থী মধুপর্ণা ও তাঁর মা রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরকে পৃথক ভাবে প্রচার করতে বলা হয়েছে মতুয়াদের মধ্যে। মতুয়াদের ভক্ত, পাগল, গোঁসাইদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের কথা শুনতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে তাঁদের বাড়ি যাবেন বাগদার নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও।
তৃণমূলের কৌশল প্রসঙ্গে প্রচারের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা নির্মল বলেন, ‘‘সব নির্বাচনের কৌশল এক হবে, এমন তো কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। নির্বাচন যখন ভিন্ন, তখন তার লড়াইয়ের পদ্ধতিও ভিন্নই হবে। তবে আমরা কী কৌশলে লড়াই করছি, তা প্রকাশ্যে আনব না।’’ প্রসঙ্গত, ২০১৯ সাল থেকে ধারাবাহিক ভাবে বাগদা আসনে জিতে আসছে বিজেপি। ২০১৯ সালে প্রথম বার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র জেতে বিজেপি। প্রথম বার প্রার্থী হয়েই জেঠিমা মমতাবালাকে পরাস্ত করেন শান্তনু। সেই ভোট থেকেই বিজেপির বাগদা-বিজয় চলছে। লোকসভা ভোটের পর বাগদার কংগ্রেস বিধায়ক দুলাল বর বিজেপিতে যোগদান করেন। ২০২১ সালে বাগদা আসনে দুলালকে টিকিট না দিয়ে বনগাঁ দক্ষিণের ‘দলবদলু’ বিধায়ক বিশ্বজিৎকে বাগদা আসনে প্রার্থী করে বিজেপি। বিধানসভায় বিজেপির ভরাডুবিতেও বাগদা ছিল পদ্মশিবিরে। ওই আসনে জিতেছিলেন বিশ্বজিৎই। কিন্তু জয়ের কয়েক মাস পরেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন বিজেপি বিধায়ক। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে শান্তনুর বিরুদ্ধে তাঁকেই প্রার্থী করে তৃণমূল। তাই বিজেপির বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। যে কারণে বাগদায় উপনির্বাচন হচ্ছে। সেই নির্বাচনে ২০ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধান ছাপিয়ে জিততে চাইছে শাসক তৃণমূল।