পার্থ চট্টোপাধ্যায়
‘পুরনো মুখে’ ভরসা করছেন না মানুষ। তাই ঝাড়গ্রামে দলের সর্বস্তরে নতুন মুখ আনার বার্তা দিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
শুক্রবার ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন পার্থবাবু। জেলা তৃণমূল আয়োজিত তফসিলি জনজাতি সভায় মুখ্য বক্তা ছিলেন তিনি। সেখানে হাজির তৃণমূলের জেলাস্তরের সব জনপ্রতিনিধি, নেতা-কর্মী এবং আদিবাসী কর্মীদের সামনে পার্থবাবুকে বলেন, ‘‘এক সময় আদিবাসীরা আমাদের দলের সৈন্য ছিলেন। ক্ষমতায় আসার পরে স্থানীয় নেতারা সেই সৈন্যদেরই ভুলে গিয়েছেন।’’ ২০০৯ সালে পুলিশের মারে চোখ হারানো লালগড়ের ছোটপেলিয়ার ছিতামণি মুর্মুর বাড়িতে কতবার দলের নেতা-কর্মীরা গিয়েছেন, সেই প্রশ্নও তোলেন পার্থবাবু।
সঙ্কট কাটাতে জঙ্গলমহলে নতুন ইনিংস শুরুর বার্তা দিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব জানান, ব্লক, ওয়ার্ড ও বুথস্তরে দল পুনর্গঠন করা হবে। পরে সাংবাদিকদের পার্থবাবু বলেন, “ঝাড়গ্রামে সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য এই সভা হল। মানুষের অভাব-অভিযোগ থাকলে তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। উন্নয়নের কাজের তদারকি আরও জোরদার করতে হবে। দলের পুনর্গঠনে তরুণ, আদিবাসী, মহিলাদের রেখে শীঘ্রই বিভিন্ন ব্লক কমিটি গঠন করা হবে।” প্রস্তাবিত নতুন মুখের নাম মুখবন্ধ খামে জমা দিতে বলেন পার্থবাবু।
এ বার পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ বড় ব্যবধানে জিতলেও বেশ কয়েকটি জায়গায় গ্রাম পঞ্চায়েত শাসকদলের হাতছাড়া হয়েছে। কোথাও জিতেছে আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ, কোথাও বিজেপি। এই অবস্থায় পার্থবাবুকে ঝাড়গ্রাম জেলার সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েতের ফলের প্রাথমিক কাঁটাছেঁড়ায় উঠে এসেছে দলের একাংশ নেতার দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের কথা। এ দিন পার্থবাবুও বলেন, ‘‘সব জায়গায় আপনারা নিজেদের লোক ঢোকাচ্ছেন। নতুন করে ২০৪ জন অলচিকি শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। সেখানেও দেখা যাবে আপনারা নিজের ভাই, কাকা, কাকিমাকে নিয়োগ করাচ্ছেন।’’
সভায় তৃণমূলের আদিবাসী সেলের নেতা তথা নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু স্বীকার করেন, ‘‘বিপুল উন্নয়ন সত্ত্বেও আদিবাসীদের একাংশ আমাদের থেকে সরে যাচ্ছেন। আমাদের কিছু দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে বিজেপি এবং মাঝি পারগানা মহলের একাংশ।’’ দুলালবাবুর আশঙ্কা, ‘‘আগামী লোকসভায় সব বুথে ভাল ফল না করতে পারলে ওরা আমাদের তাড়িয়ে ছাড়বে।’’ ঝাড়খণ্ড থেকে চোর-ডাকাত এনে ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও কর্মীদের সতর্ক করেছেন পার্থবাবু। একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেন এবং জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি। অজিতবাবুর অভিযোগ, ‘‘সামাজিক সংগঠনের নাম করে কিছু লোকজন মাওবাদী ও বিজেপির সাহায্য নিয়ে অশান্তি বাঁধাতে চাইছে।’’