বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। পশ্চিমবঙ্গে দলের অন্যতম প্রধান মুখ। গত বিধানসভা ভোটের পর থেকে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে সেই শুভেন্দু অধিকারীকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলেও রাজনৈতিক শিবিরের পর্যবেক্ষণ। কিন্তু এই পুরো বিষয়টিকে শাপে বর হিসেবে দেখছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
মঙ্গলবার দিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলাপচারিতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “বিজেপি নেতৃত্ব ওঁকে যত বেশি গুরুত্ব দেয়, আমাদের জন্য ততই ভাল। কারণ, রাজ্যে বিজেপিকে শক্তিশালী করার দিকে ওঁর নজর বা ইচ্ছা নেই। উনি শুধু ব্যস্ত দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে।” রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের অবশ্য বক্তব্য, শুভেন্দু খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে ভোটে হারিয়েছেন। আবার সময় এলেই তৃণমূল কংগ্রেস টের পাবে যে, শুভেন্দুর গুরুত্ব কতটা।
সাংগঠনিক দল হিসেবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাধারণত রাজ্য সভাপতিকেই সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে, পশ্চিমবঙ্গে তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে সম্প্রতি। বাংলায় রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের তুলনায় শুভেন্দু বেশি পোড়খাওয়া নেতা। অধিকাংশ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে হয়তো সেই কারণেই শুভেন্দুর মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। তা ছাড়া, শুভেন্দুর পক্ষে গিয়েছে বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামে মমতাকে হারানোর বিষয়টিও।
বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোট। এই প্রসঙ্গে অভিষেকের দাবি, তৃণমূলের অন্তত ৩২টি আসন জেতা নিয়ে তাঁর কোনও সন্দেহ নেই। সংখ্যা নাকি তার থেকে বাড়বে বই কমবে না। তবে সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “নিখুঁত পূর্বাভাস এত আগে করা যায় না। ভোটের মুখে ছবিটা আরও স্পষ্ট হবে।” তাঁর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে মোট ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২২টিতে লড়াই হবে। বাকি ২০টিতে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত। ওই ২২টির মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ আমরা পাবই। ফল যদি খুব খারাপও হয়, ৩২টি আসন আমরা পাবই।”
সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে কংগ্রেসকে আজ দুষতে ছাড়েননি অভিষেক। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পরে তৃণমূলকে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে ঘটনার ঘোর নিন্দা করেছিলেন। এ দিন অভিষেক বলেন, “আমরা কিন্তু রাহুল গান্ধী বা কংগ্রেসের নীতিকে সমর্থন করছি না। নজিরবিহীন ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। রাহুল না হয়ে অন্য যে কারও সঙ্গে এটা করা হলেও আমার একই প্রতিক্রিয়া হত।” তাঁর কথায়, “যে যেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে বেশি শক্তিশালী, কংগ্রেসকে তাকে সেখানে লড়তে দিতে হবে।... অধীর চৌধুরী পশ্চিমবঙ্গে আমাদের কুকথা বলবেন আর এখানে ইডি-কে, তা চলবে না। কংগ্রেস আদর্শের সঙ্গে সমঝোতা করে বাংলায় সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে, অথচ কেরলে লড়ছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার।”