—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার তদন্ত নিয়ে সিবিআইয়ের উপরে চাপ বাড়াতে শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস। ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা পুলিশ এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল। তা মনে করিয়ে সোমবার দলের তরফে বলা হয়েছে, ‘তার পর থেকে সিবিআই তদন্ত চালালেও আর কোনও গ্রেফতার হয়নি। আমরা চাই, সময়সীমা বেঁধে দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত শেষ করে দোষীকে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হোক।’ সেই সঙ্গেই এই ঘটনাকে সামনে রেখে রাজ্যের নির্বাচিত সরকার ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে নানা মহলে। তাকে ‘রাজনৈতিক’ হিসেবে চিহ্নিত করে এ বার পাল্টা চাপ তৈরির কৌশল নিল তৃণমূল। সাংবাদিক বৈঠক করে দলের নেতা কুণাল ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রবিবারের (১৮ অগস্ট ) মধ্যে তদন্ত শেষ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরের দিনই তদন্তের ভার দেওয়া হয় সিবিআই-কে। এখন সিবিআই-কে আদালতে জানাতে হবে, বেশ কয়েক দিন কেটে গেলেও তারা কতটা এগিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যে দিন ধৃতকে আদালতে তুলবে, সে দিনই সিবিআইয়ের প্রথম চার্জশিট দিয়ে দেওয়া উচিত। তার পরে তারা তদন্ত চালাতেই পারে।’’
ওই ঘটনার পর থেকে বিরোধীরা বারবারই রাজ্যের পুলিশ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই এ দিন তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘এই দাবির আসল লক্ষ্য অপরধারে বিচার নয়। আসলে ভিতরে ভিতরে একটা ষড়যন্ত্র চলছে। মানুষের রায়ে (নির্বাচনে) যা সম্ভব হয়নি।’’ এই ‘ষড়যন্ত্র’ সম্পর্কে আরও নির্দিষ্ট করে কুণালের অভিযোগ, ‘‘সাধারণ মানুষের আবেগকে বাম-রাম রাজনীতি বিকৃত ভাবে ব্যবহার করতে চাইছে। তাতে রাজ্যপালকেও ব্যবহার করতে চাইছে তারা।’’ তাঁদের দাবি, এ ভাবেই বিজেপির নেতারা রাজ্যপালের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন, রাজ্য সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির কাছে যাতে বিরূপ রিপোর্ট রিপোর্ট পাঠানো হয়। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডার সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে এ দিনই দিল্লি গিয়েছেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস।
কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে পুলিশের পাশেই দাঁড়িয়েছে শাসক দল। আন্দোলনকারী সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের লালবাজারে তলব নিয়ে যে সমালোচনা শুরু হয়েছে, তা-ও খারিজ করে দিয়েছেন কুণাল। দুই চিকিৎসক কুণাল সরকার ও সুবর্ণ গোস্বামীকে তলব করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিবাদ করলেই পুলিশ ডাকছে, এটা মিথ্যা। বিচার তো আমরাও চাইছি। কিন্তু কেউ এমন স্পর্শকাতর সময়ে ঘটনা ও তদন্ত সম্পর্কে ভুল তথ্য আনলে, ভুয়ো অডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে পুলিশ ডেকে কথা বলতেই পারে।’’ নাম না-করে তিনি বলেন, ‘‘এক চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতালে বিপুল টাকা খরচে অস্ত্রোপচার করেছিলেন। তার পরে রোগীর দেহে গজ ঢুকে ছিল। তা বার করতে হয় সরকারি হাসপাতালে। তখন তো ওই চিকিৎসকে পুলিশি তদন্তের মুখে পড়তে হয়নি!’’
ব্যক্তিগত কাজে এ দিনই সিবিআই দফতরে গিয়ে আরজি সংক্রান্ত কিছু তথ্য জমা দিয়ে এসেছেন কুণাল। তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের একাংশের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছেন তিনি। সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা পুরোদস্তুর চালু করতে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের কাছে এ দিন ফের এক বার আবেদনও জানিয়েছেন শাসক দলের দুই নেতা।