ছবি: পিটিআই।
একদিন আগেই প্রিয় ‘কেষ্ট’র প্রতি তাঁর আস্থা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সেই আস্থার প্রতিই যেন সুবিচার করলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রায় জনপ্লাবন দেখে খালি চোখেই বোঝা গিয়েছে জনসমাগম ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের র্যালির থেকে বেশি। ডাকসাইটে সংগঠক অনুব্রতর দলের নীচুতলা অবধি নিয়ন্ত্রণই এর কারণ বলে মত অনেকের। অনুব্রত নিজে অবশ্য এ দিন সাংবাদিকদের বলেন, “এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব।”
ন’দিন আগে অমিত শাহের র্যালির পরে অনুব্রত অভিযোগ করেছিলেন, পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড-সহ অন্য জেলা থেকে লোক নিয়ে এসেছিল বিজেপি। স্থানীয় মানুষজন ছিলেন না। এর পরেই তৃণমূলের তরফে পাল্টা পদযাত্রা কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। সেখানেই প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অনুব্রত জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই পদযাত্রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আড়াই লক্ষ মানুষ হাঁটবেন। পুলিশ-প্রশাসনের হিসেবে এ দিন পদযাত্রায় লক্ষাধিক মানুষ ছিলেন। বোলপুরের বাসিন্দারাও জানাচ্ছেন, এই মাপের জনসমাগম তাঁরা দেখেননি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, অনুব্রত এ দিনের পদযাত্রা সফল করতে দলের প্রতি স্তরে লক্ষ্য বেঁধে দেন। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিপুল সংখ্যক লোক জোগাড় করতে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয় বোলপুর ডিভিশন এলাকায়। বলা হয়, বোলপুর শহরের ২০টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে দেড় থেকে দুই হাজার লোক জমায়েত করতে হবে। বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লকের অন্তর্গত রূপপুর, রাইপুর-সুপুর, কসবা, কঙ্কালীতলা, সিয়ান, মুলুক-সহ ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে কমপক্ষে ৫,০০০ করে লোক আনতে বলা হয়েছিল। এ ছাড়াও লাভপুর, নানুর ও ইলামবাজার ব্লক থেকে ৩০ হাজার লোক আনার লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও তৃণমূলের প্রতিটি অঞ্চলের ব্লক সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি, শিক্ষক সংগঠন, আইটি সেলের কর্মীদের উপরেও নিজের নিজের এলাকা থেকে পর্যাপ্ত সমর্থকদের এনে পদযাত্রায় শামিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে তৃণমূলের সংগঠন ও অনুব্রতর নিয়ন্ত্রণ থাকায় কাজটা সম্ভব হয় বলে মনে করছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। পদযাত্রায় ছিলেন স্বনির্ভর দলের বহু মহিলা, হাজার খানেক কীর্তনের দল, আদিবাসী নৃত্যশিল্পীদের বহু দল। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রতি ব্লক থেকেই ২৫-৩০টি বাস, ছোট গাড়ি এসেছিল। অন্তত পাঁচ থেকে সাত হাজার লোক প্রতি ব্লক থেকেই এসেছিলেন বলে তৃণমূল নেতাদের দাবি। তবে সংগঠিত ভিড় ছাড়ায় বোলপুর শহরের বহু মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ দিন পদযাত্রা দেখতে আসেন। রাস্তা লাগোয়া বাড়িগুলির ছাদে তিলধারণের জায়গা ছিল না। একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে যায় বোলপুর শহর। অনুব্রত এ দিন পদযাত্রার শেষে দাবি করেন, এ দিনের পদযাত্রায় তিন লক্ষেরও বেশি মানুষ হাজির হয়েছিলেন। তাঁদের কেউই হিন্দিভাষী, অর্থাৎ অন্য জায়গা থেকে আগত ছিলেন না। সকলেই বীরভূম ও বোলপুর মহকুমা এলাকার বাসিন্দা।