সুকন্যা-সহ ছ’জনকে যে ভাবে সামাজিক ভাবে অপদস্থ হতে হল, তা কি যথাযথ? প্রশ্ন কুণালের ফাইল চিত্র।
অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে-সহ ছয় জনকে হাই কোর্টে ডেকে পাঠানো, কাগজপত্র দেখতে চাওয়া এবং পরে বুধবারের সেই নির্দেশকে বিচারপতির প্রত্যাহার করার বিষয়টিকে তৃণমূল সামাজিক হেনস্থা হিসাবেই দেখছে। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আমরা কাউকে সমর্থন করছি না, কারও বিরোধিতাও করছি না। তবে আমরা মনে করি, যে ভাবে কয়েক জনকে সামাজিক হেনস্থার শিকার হতে হল, তা কাম্য নয়। ওঁরা কেউ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও পেলেন না।’’
বুধবারই অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল-সহ তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ ছ’জনকে বেআইনি ভাবে স্কুলে চাকরি দেওয়া হয়েছে অভিযোগ এনে একটি হলফনামা জমা দেওয়া হয় কলকাতা হাই কোর্টে। যার জেরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ সুকন্যা-সহ ছ’জনকে টেটের শংসাপত্র নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে দেখা করতে বলে। এমনকি, আদালতে তাদের হাজিরা নিশ্চিত করতে বীরভূম জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠীকেও নির্দেশ পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের নির্দেশে সাড়া দিয়ে যাবতীয় নথিপত্র সঙ্গে নিয়ে হাজিরও হয়েছিলেন অনুব্রত-কন্যা। কিন্তু শুনানিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সুকন্যাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া হলফনামাটি খারিজ করেন। তিনি জানিয়ে দেন সুকন্যাদের হাজিরা দিতে বলার যে নির্দেশ বুধবার দেওয়া হয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। কুণাল এই ঘটনাপ্রবাহের পরস্পরবিরোধিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। আদালতের ঘটনাক্রম প্রসঙ্গে কুণালের প্রশ্ন, ‘‘যে অভিযোগটি বুধবারও এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে জেলা সুপারকে নির্দেশ দিয়ে অভিযুক্তদের ডেকে পাঠাতে হচ্ছিল, পরের দিন সকালে আর তার কোনও গুরুত্বই রইল না?’’ আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি তাঁর আস্থা আছে এবং বিচারপতিকেও তিনি সম্মান করেন জানিয়ে কুণাল জানতে চেয়েছেন, ‘‘যদি তা-ই হবে, তা হলে বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টায় সুকন্যা-সহ ছ’জনকে যে ভাবে সামাজিক ভাবে অপদস্থ হতে হল, তা কি যথাযথ হল?’’
বৃহস্পতিবার কুণাল বলেন, ‘‘বিচারকের প্রতি পূর্ণ সম্মান রয়েছে। কিন্তু এই ধরনের ঘটনায় একটি অতিরিক্ত হলফনামার উপর ভিত্তি করে বিচারপতি এত গুরুত্ব দিয়ে ছ’জনকে আনাতে বললেন, পুলিশ সুপারকে নিশ্চিত করতেও বললেন। তার পর সব জায়গায় দেখা গেল এক তরুণীর ছবি। তাঁকে তিরবিদ্ধ করে প্রচার চলল। দেখা গেল সেই মেয়েটি, তার ঠিক-ভুল কোর্টের ব্যাপার, কিছু কাগজপত্র নিয়ে কোর্টে এসেছেন। কিন্তু যে প্রসঙ্গ তুলে তাঁকে আক্রমণ করে ইঙ্গিতপূর্ণ প্রচার হল, তিনি সেটার ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনও সুযোগই পেলেন না।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি কাউকে সমর্থন করছেন না। সুকন্যার বিরুদ্ধেও টেট না দিয়ে স্কুলের চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি প্রসঙ্গে দলের অবস্থান ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি। কুণালের বক্তব্য, তিনি যেমন কাউকে সমর্থন করছেন না, তেমনই কারও বিরোধিতাও করছেন না। তবে যে ভাবে অভিযুক্তদের তড়িঘড়ি ডেকে পাঠিয়েও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হল না, তা কুণালের কথায়, ‘‘মেনে নেওয়া যায় না।’’