মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে আগামী সোমবার। তার আগে শনিবারই সর্বদল বৈঠকে বসলেন কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের পক্ষে এই বৈঠকে যোগ দেন লোকসভার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। এই অধিবেশনেই ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হতে পারে দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের। সূত্রের খবর, সর্বদল বৈঠকেও মহুয়া প্রসঙ্গ তুলেছে তৃণমূল। মোট ছ’টি দাবি তুলে অধিবেশন শুরুর আগেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল।
তবে প্রকাশ্যে তৃণমূলের তরফে বলা হচ্ছে, তারা যা বলার বৈঠকেই বলেছে। সূত্রের খবর, তৃণমূল প্রথমেই সর্বদল বৈঠককে ‘গুরুত্বহীন’ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়। যথেষ্ট আলোচনা না করে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম— এই তিনটি বিল যাতে সংসদে পাশ করানো না হয়, সেই দাবিও বৈঠকে তুলেছে তৃণমূল।
সূত্রের খবর, বৈঠকে মহুয়া মৈত্র প্রসঙ্গও তুলেছে তৃণমূল। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে লোকসভার এথিক্স কমিটির রিপোর্ট স্পিকারের কাছে জমা পড়ার আগেই কী ভাবে সেই রিপোর্ট সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে গেল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। সংসদে মহুয়া-বিতর্ক নিয়ে আলোচনা হলে এই বিষয়টিকে সামনে রেখে শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পরিকল্পনা করছে তৃণমূল। তৃণমূলের তরফে বৈঠকে বলা হয়েছে, তারা সংবাদমাধ্যমের থেকে জানতে পেরেছে যে, ‘দলের এক সাংসদ’কে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। ‘টাকা নিয়ে প্রশ্ন’ করার ঘটনায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সাংসদপদ খারিজ সংক্রান্ত রিপোর্ট সোমবারই লোকসভায় জমা করতে পারে এথিক্স কমিটি। তার আগেই লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। চিঠিতে তিনি মহুয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সংসদীয় কমিটিগুলির নিয়ম এবং পদ্ধতিগুলির পর্যালোচনা করার দাবি জানিয়েছেন।
রাজ্যের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে বেশ কয়েক দিন ধরেই সরব তৃণমূল। সংসদেও এই বিষয়ে সরব হতে চাইছে তারা। বৈঠকে ১০০ দিনের কাজের ‘বকেয়া’ টাকা নিয়েও সংসদে আলোচনার দাবি তুলেছে তৃণমূল। এর সঙ্গেই দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অগ্রাহ্য করে কেন্দ্র অকারণে রাজ্যের বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাইছে— এমন অভিযোগ তুলে এই নিয়েও আলোচনা চেয়েছে রাজ্যের শাসক দল।
বৈঠকে তৃণমূলের তরফে এ-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয় যে, তারা সুষ্ঠু ভাবে সংসদ চলতে দেওয়ার পক্ষে। তবে সরকার নিজেদের কাজকর্মের বিষয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখবে এবং বেকারত্ব কিংবা মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয় নিয়ে বিরোধীদের আলোচনা করতে দেবে বলে আশাপ্রকাশ করেছে তারা। তবে অতীতে যে বহু বিল পাশ করানোর ক্ষেত্রে বিরোধীদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছিল, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তারা।