চলছে সিপিএম নেতার (ইনসেটে) বাড়ির জলের সংযোগ কাটার কাজ।
সিপিএমের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের বাড়ির জলের সংযোগ কেটে দিল মেদিনীপুর পুরসভা। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার দাবি, বেআইনি বলেই ওই সংযোগ কাটা হয়েছে। যদিও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপকবাবু এই ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে অভিযোগ তুলেছেন।
মেদিনীপুর শহরের বিধাননগরে বাড়ি দীপকবাবুর। সোমবার যখন তাঁর বাড়ির জলের সংযোগ কাটা হয়, তখন শহরে ছিলেন না দীপকবাবু। দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে গিয়েছিলেন শ্রীরামপুরে। সেখানেই পরিবারের তরফে জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা জানতে পারেন তিনি। পরে প্রবীণ এই সিপিএম নেতা বলেন, “কুড়ি বছর আগের জলের লাইন এ ভাবে না জানিয়ে কেটে দেওয়া যায় বলে জানতাম না। বেআইনি কিছু হয়ে থাকলে পুরসভা তো আগে জানাবে। নোটিস দিয়ে বা মৌখিক ভাবে কিছুই জানানো হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই এটা করা হয়েছে।” মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসুর অবশ্য বক্তব্য, “বেআইনি লাইন ছিল। তা কেটে দেওয়া হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকালে পুর-কর্মীদের নিয়ে দীপকবাবুর বাড়ির সামনে যান পুর-পারিষদ (জল) মৌ রায়। তাঁর নির্দেশেই জলের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। মৌদেবী কাউন্সিলরও বটে। তিনি বলেন, “এলাকার মানুষ আমার কাছে দাবিপত্র দিয়ে জানিয়েছিলেন, বাড়িতে পর্যাপ্ত জল যাচ্ছে না। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, ওঁর বাড়িতে জলের একটি সরাসরি লাইন রয়েছে। ফলে প্রচুর পরিমাণ জল ওই বাড়িতে চলে যায়। এটা বেআইনি তাই লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে।”
কিন্তু প্রথমে মৌখিক ভাবে বা নোটিস দিয়ে কেন দীপকবাবুর পরিবারকে সে কথা জানানো হল না? মৌদেবীর জবাব, “সরাসরি লাইন থাকার কথা পুরপ্রধানকে জানিয়েছিলাম। তাঁর নির্দেশেই লাইন কাটা হয়েছে।” শহরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসও বলেন, “পুরসভা অন্যায় কিছু করেনি। এ ভাবে বাড়িতে সরাসরি লাইন থাকে না। বেআইনি কিছু হয়ে থাকলে পুরসভা তো পদক্ষেপ করবেই।” বাড়ির জলের লাইন কি বেআইনি ছিল? দীপকবাবু বলেন, “বলা হচ্ছে, জলের লাইনের পাইপ না কি একটু মোটা ছিল। অথচ কুড়ি বছর আগে এই লাইন তো পুরসভাই করে দিয়েছিল।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের মন্তব্য, ‘‘অমানবিক ব্যাপার। দলের তরফে গোটা ঘটনার নিন্দা করছি।’’
দীপকবাবুর জানিয়েছেন, এ দিন সকালে বাড়ি থেকে বেরনোর সময় কয়েকজনকে বাড়ির সামনে দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু জলের সংযোগ কাটা হতে পারে, এ কথা তাঁর ভাবনাতেও আসেনি। ওই বাড়িতে দীপকবাবু ছাড়াও থাকেন তাঁর বৃদ্ধা স্ত্রী, ছেলে, বৌমা এবং স্কুল পড়ুয়া নাতি। বাড়িতে একটিমাত্র জলের সংযোগ। সেটি কেটে দেওয়ায় পরিবারের সকলেই বিপাকে পড়েন।
সিপিএম নেতা-কর্মীদের একের পর এক মামলায় জড়িয়ে হেনস্থার অভিযোগ নতুন নয়। রাজ্যে পালাবদলের পর দীপকবাবুকেও মামলায় জড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক শিক্ষক-চিকিত্সকের অপমৃত্যুতে তাঁর নাম জড়িয়েছিল। তবে সেই ঘটনার জল বেশি দূর গড়ায়নি।
২০১৩ সালের নির্বাচনে জিতে একক ভাবে মেদিনীপুর পুরসভা দখল করেছে তৃণমূল। তারপরেও এতদিন ধরে ওই বেআইনি লাইন থাকল কী ভাবে?
এ বার পুর-পারিষদ (জল) মৌদেবীর ব্যাখ্যা, “আসলে বাম-জমানায় এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। এখন মানুষ প্রতিবাদ করছেন। এলাকাবাসী দাবিপত্র দিয়েছিলেন বলেই তো বিষয়টা জানা গেল!” এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “বেআইনি কিছু হলে পুরসভা ব্যবস্থা নেবে, এ আর নতুন কি!”