মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বুলডোজার দিয়ে দিল্লির জহাঙ্গিরপুরীতে ‘বেআইনি নির্মাণ’ ভাঙা শুরু করেছিল উত্তর দিল্লি পুরসভা। ফাইল চিত্র
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দিল্লির জহাঙ্গিরপুরী যাচ্ছেন তৃণমূল সাংসদরা। তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী শুক্রবার বারাসাতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের নেতৃত্বে পাঁচ জন সাংসদের একটি প্রতিনিধি দল ওই এলাকা পরিদর্শনে যাবেন। পরিদর্শনকারী তৃণমূল সাংসদরা স্থানীয় জনতা ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি রিপোর্ট জমা দিতে পারেন বলেই সূত্রের খবর। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও বুলডোজার দিয়ে দিল্লির জহাঙ্গিরপুরীতে ‘বেআইনি নির্মাণ’ ভাঙা শুরু করেছিল উত্তর দিল্লি পুরসভা। পুরসভার ওই সিদ্ধান্তের আগেই স্থগিতাদেশ জারি করেছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু আদালতের রায়ের কপি হাতে না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। পরে আদালতের সেই স্থগিতাদেশের কপি হাতে নিয়ে বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে তা আটকে দেন সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট। তার পর থেকেই জহাঙ্গিরপুরী এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ভিন্ন মাত্রা পেতে শুরু করেছে। এ বার ওই এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছে তৃণমূল প্রতিনিধি দলও।
গত শনিবার হনুমান জয়ন্তীর দিন দিল্লির জহাঙ্গিরপুরীতে হিংসার ঘটনা ঘটে। তাতে কয়েক জন সাধারণ মানুষ ছাড়াও একাধিক পুলিশকর্মী আহত হন। ঘটনাক্রমে দিল্লি বিজেপির সভাপতি আদেশ গুপ্তা হুঁশিয়ারি দেন, জহাঙ্গিরপুরী মসজিদের পাশাপাশি থাকা সব ‘বেআইনি নির্মাণ’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। একই ঘোষণা আসে এনডিএমসি-র তরফেও। এর পর মঙ্গলবার সকালে ১০টা নাগাদ উত্তর দিল্লি পুরসভা থেকে ন’টি বুলডোজার পাঠানো হয় ওই জায়গায়। প্রায় ৪০০ পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য। ঘটনাস্থলের ‘অবৈধ’ দোকানপাট ভাঙচুরের সময়ই সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের কপি নিয়ে পৌঁছন এক মামলাকারী। তাঁদের দাবি, একটি সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে এমন অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযোগ, এই ভাঙচুর অভিযান নিয়ে আগে থেকে দোকান মালিকদের কিছুই জানায়নি পুরসভা। বুলডোজার দিয়ে দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনায় বিজেপি নেতৃত্ব ও দিল্লি পুর প্রশাসনের এমন মন্তব্যকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করে এ ক্ষেত্রে এগোতেই চাইছে তৃণমূল।
তবে রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, যে ভাবে বীরভূমের বগটুই ও নদিয়ার হাঁসখালির ঘটনায় বিজেপি নিজের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতিনিধি হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়েছিল, তারই পাল্টা রাজনৈতিক জবাব হিসেবে জহাঙ্গিরপুরী এলাকায় যাচ্ছেন তৃণমূল সাংসদরা। তবে তৃণমূল সূত্রে খবর, দিল্লির জহাঙ্গিরপুরী ঘটনায় বিজেপি তথা কেন্দ্রের শাসক দলের স্বৈরাচারী মুখ আবার প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। তারা দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশও মানছে না। তাই বিজেপির মুখোশ ভারতের জনতার সামনে খুলে দিতেই তৃণমূলের প্রতিনিধিদল জহাঙ্গিরপুরী যাচ্ছেন। এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে দিল্লি থেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।