গরু পাচার নিয়ে অমিত শাহকে (বাঁ দিকে) তোপ অভিষেকের (ডান দিকে)।
পশ্চিমবঙ্গের বাগদায় ধর্ষণের ঘটনায় দুই বিএসএফ জওয়ানের ধরা পড়ার ঘটনাকে অমিত শাহের বিরুদ্ধে তোপ দাগার ‘হাতিয়ার’ করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ, বাগদায় শিশুকন্যার সামনে তার মাকে ধর্ষণ করেছে বিএসএফ। সোমবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাদিবসের কর্মসূচিতে ভাষণ দিতে গিয়ে ওই ঘটনার ‘দায়’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপরেই চাপালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বস্তুত, শাহের নাম না করে কয়লা এবং গরু পাচারের দায়ও তিনি চাপিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপরেই। অভিষেকের কথায়, এ সব ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-কেলেঙ্কারি’!
গরু পাচার-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল এবং তাঁর দেহরক্ষী সহগল হোসেন। কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই জেরার মুখে পড়েছেন অভিষেক নিজেও। অনুব্রতের গ্রেফতারির ঘটনায় বাংলার শাসকদল ‘চাপ পড়েছে’ বলেই বিরোধী বিজেপি এবং সিপিএমের দাবি। অভিষেকের সোমবারের বক্তব্যে স্পষ্ট— তিনি গোটা অভিযোগের অভিমুখটাই ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন কেন্দ্রীয় সরকার তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দিকে।
বাগদায় ওই ঘটনা ঘটার পরেই বিষয়টি নিয়ে ‘সক্রিয়’ হয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা-সহ অন্য নেতাদের রবিবার বাগদায় পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকেও তাঁরা শাহের ইস্তফার দাবি তুলেছিলেন। কারণ, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অভিযুক্ত বিএসএফের জওয়ানরা শাহের মন্ত্রিত্বের অধীন। ঠিক যেমন সিবিআই অধীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। যেমন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) অধীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের।
অর্থাৎ, শাহকে আক্রমণের পটভূমি আগে থেকেই তৈরি করেছিল তৃণমূল। মেয়ো রোডের সভায় অভিষেক তাকেই আরও কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ওই সভায় অভিষেক বলেন, ‘‘ভারত স্বাধীন হওয়ার পর গত ৭৫ বছরে যা ঘটেনি, এখন তাই হচ্ছে। শিশুকন্যার সামনে বিএসএফ তার মাকে ধর্ষণ করছে। বাগদার ধর্ষণের ঘটনা মোদী-শাহের নতুন ভারতের নিদারুণ উদাহরণ।’’ তার পরেই অভিষেক আক্রমণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে বলেন, ‘‘বিএসএফের নাকের তলা দিয়ে গরু পাচার হয়, কয়লা পাচার হয়। আর ওরা তৃণমূলের দিকে আঙুল তোলে! কোলিয়ারির (কয়লাখনি) নিরাপত্তা দায়িত্বে কে রয়েছে? সিআইএসএফ। সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে কে রয়েছে? বিএসএফ। তা হলে কীভাবে গরু পাচার হয়? কীভাবে কয়লা পাচার হয়?’’
প্রসঙ্গত, শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনেই রয়েছে বিএসএফ এবং কেন্দ্রীয় শিল্পাঞ্চল নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ)। সেই প্রসঙ্গ টেনেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে দায়ী করে অভিষেক বলেন, ‘‘তা হলে পাচারের টাকা কি দিল্লি গিয়ে পৌঁছচ্ছে? এর অপদার্থতা কার? কেন্দ্রীয় সরকারের। এটা কয়লা বা গরু কেলেঙ্কারি নয়, এর নাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেলেঙ্কারি। কারণ, এর টাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে পৌঁছচ্ছে।’’ কেন কেন্দ্রীয় সরকার ‘এ সব’ করছে? সভার শুরুতেই সেই জানিয়েছেন অভিষেক স্বয়ং। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়েছেন বলেই এদের গায়ে জ্বালা!’’