তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
স্ত্রী, ৩ বছরের ছেলে, এমনকি, তাঁকে জেলে ঢোকালেও বিজেপির সামনে তিনি মাথা নত করবেন না। সোমবার তৃণমূলের জনসংযোগ যাত্রা কর্মসূচিতে ফুরফুরা শরিফে গিয়ে এ কথাই জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে অভিষেক জানালেন, ক্ষমতা থাকলে তাঁকে গ্রেফতার করা হোক। তাঁর দাবি, নবজোয়ার যাত্রা আটকানোর জন্যই এ সব করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন। গলা কেটে দিলেও বিজেপিতে যোগ দেবেন না। অভিষেক জানিয়েছেন, আগামী ৮ জুন তাঁর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দফতরে হাজিরা দেবেন।
সোমবার অভিষেক স্পষ্টই জানিয়েছেন যে, তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে পেরে উঠছে না বিজেপি। সে কারণেই ইডি, সিবিআই লাগানো হচ্ছে। এখন নবজোয়ার যাত্রা বন্ধ করতেই ফের তাঁর স্ত্রীকে তলব করেছে সিবিআই। অভিষেক জানান, গত সেপ্টেম্বরে চোখের চিকিৎসার জন্য তাঁর সঙ্গে বিদেশ গিয়েছিলেন স্ত্রী রুজিরা। তখন বাধা দেয়নি ইডি। অভিষেকের যুক্তি, ‘‘এখন তৃণমূলে নবজোয়ার চলছে বলে কী ভাবে অভিষেককে মানসিক ভাবে হেনস্থা করা যায়, চেষ্টা চলছে।’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রীকে বিদেশ যাত্রার অনুমতি দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। গত ১৭ অক্টোবর সে কথা জানানো হয়েছিল। এর পরেও ৩ জুন তাঁর স্ত্রী মেল করে ইডিকে বিদেশ যাত্রার কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ইডি চাইলে সে দিনই সমন পাঠাতে পারত। কিন্তু করেনি। হেনস্থা করবে বলে অপেক্ষা করছিল।’’
তবে অভিষেকের দাবি, তিনি অন্য ধাতুতে তৈরি। মেরুদণ্ড বিক্রি করে তিনি লড়াই করেন না। এর পরেই প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘আমি নরেন্দ্র মোদীকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সম্মান জানিয়েই বলছি যে, আমার বয়স ৩৬, আপনার ৭২। আপনি মানুষের দরবারে এসে আমার সঙ্গে লড়াই করুন।’’ অভিষেকের দাবি, তাঁর সঙ্গে লড়াইয়ে না পেরেই স্ত্রী, সন্তানদের ‘টার্গেট’ করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘৩ বছরের ছেলে, ৯ বছরের মেয়ে, তাদেরও ছাড়ছেন না। পরিবারকে টার্গেট করলেও মাথা নত করব না, গলা কাটলেও মাথা নত করব না।’’ আগামী দিনে মোদীকে ‘উৎখাত’ করে ছাড়বেন বলেও জানিয়েছেন অভিষেক।
সোমবার সকালে বিদেশ যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে অভিষেকের স্ত্রী এবং ২ সন্তানকে আটকায় ইডি। ৮ জুন রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে সমনও পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। নাম না করে তাঁর অভিযোগ, ২০১৯ সালে সোনা পাচার করেছেন রুজিরা। রাতে ফুরফুরা শরিফে দাঁড়িয়ে সেই অভিযোগের জবাব দেন অভিষেক। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জানান, গোটা বিমানবন্দরে ৫০০টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। বিমানবন্দরে পাহারা দেয় সিআইএসএফ, যা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে। বিরোধী দলনেতা প্রমাণ করুন যে, তাঁর স্ত্রী ২ গ্রাম সোনা পাচার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল যেহেতু মানুষের স্বার্থে লড়ছে, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে, ইডি-সিবিআই লাগিয়ে যাত্রাটাকে কী ভাবে আটকানো যায়, সেই চেষ্টা চলছে।’’
তিনি যে মেরুদণ্ড বিকিয়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন না, সে কথাও জানিয়েছেন অভিষেক। তাঁর দাবি, নন্দীগ্রামে তিনি ২০ কিলোমিটার পদযাত্রা করার পরেই শুভেন্দু ভয় পেয়ে গিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘নন্দীগ্রামে ২০ কিলোমিটার পদযাত্রা করেছি, সমন তার পুরস্কার।’’ নাম না করেই দাবি করেছেন, শুভেন্দু এবং তাঁর পরিবার ‘পা থেকে মাথা পর্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত’। এই প্রসঙ্গেই অভিষেক জানান যে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের থেকেও বেশি ‘লাভবান’ হয়েছেন শুভেন্দু। কেন তিনি এই কথা বলেছেন, তাঁর যুক্তিও দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘টিভিতে দেখেছি, পার্থকে দালালদের মাধ্যমে যে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের ৯০ শতাংশ পূর্ব মেদিনীপুরের। পূর্ব মেদিনীপুরের যিনি সর্বেসর্বা ছিলেন, তাঁকে ধরুন। পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁরাও সব পূর্ব মেদিনীপুরের। সারদাকাণ্ডেও সব থেকে বেশি লাভবান শুভেন্দু।’’