অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
ভাল কাজ না করলে তিন মাসেই বদল করা হবে পঞ্চায়েত প্রধান। রবিবার সুজাপুরের হাতিমারির ময়দানে প্রচারসভা করেন অভিষেক। সেখানেই নিজের বক্তৃতার শেষের দিকে এ কথা বলেন তিনি। সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের জয়ের পর বিজয়োৎসব কোথায় হবে তা-ও জানিয়ে দিলেন সুজাপুরের নেতা-কর্মীদের জানিয়ে দেন।
অভিষেক বলেন, আমি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলে যাচ্ছি। এ বার থেকে ২ মাস অন্তর আমি মালদহ জেলায় আসব। পঞ্চায়েতের কাজ নিজেই পর্যালোচনা করব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তিন মাস অন্তর পঞ্চায়েতের প্রধানের কাজের পর্যালোচনা আমি নিজে করব। প্রধান ভাল কাজ করলে মেয়াদ বাড়ানো হবে। ভাল কাজ না করতে তাঁকে সরানো হবে। যদি পদে থেকে কোনও দুর্নীতি করেন তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে প্রশাসনিক ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’ অভিষেক অবশ্য এই ঘোষণা করেছেন কেবলমাত্র মালদহ জেলার জন্য। কারণ অভিষেক স্পষ্ট জানিয়েছেন, মালদহের ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর নজর থাকবে তাঁর। প্রতি দু’মাস অন্তর মালদহে এসে কাজের পর্যালোচনা করবেন। স্বচ্ছ পঞ্চায়েত প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে এই নজরদারি প্রয়োজন বলেই মতপ্রকাশ করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজের কোচবিহার ও মালবাজারের সভায় পঞ্চায়েত স্তরে নিজেই নজরদারির কথা ঘোষণা করেছিলেন। আর এ বার আরও এক কদম এগিয়ে মালদহে অভিষেক স্বয়ং পঞ্চায়েত প্রধানের কাজের ওপর নজরদারি করবেন বলে জানিয়েছেন।
৮ জুলাই পঞ্চায়েত ভোট। ফলাফল ঘোষণা হবে ১১ জুলাই। অভিষেক মালদহের জেলা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জানিয়েছেন, ফলাফল ঘোষণা পর ২১ জুলাই কলকাতায় হবে দলের বিজয়োৎসব। ওই দিন তৃণমূলে শহিদ দিবসের সমাবেশ হবে কলকাতায়। মালদহ জেলার দু’টি লোকসভা আসন কোনও দিনও জিততে পারেনি তৃণমূল। সেই লক্ষ্যে একযোগে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপিকে আক্রমণ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে উত্তর মালদহে বিজেপি জিতেছিল। দক্ষিণ মালদহে জিতেছিল কংগ্রেস। এক দিকে খগেন মুর্মু ও অন্য দিকে আবু হাসেম খান চৌধুরী। এঁরা গত চার বছরে একটা বৈঠক করেননি। যে দুজন কংগ্রেস সাংসদ রয়েছেন, তাঁরা কখনও বাংলার অর্থ বরাদ্দ নিয়ে সরব হননি। অধীর চৌধুরী আবু হাসেম খান চৌধুরীর কিছুই বলেননি।’’
বিরোধী সবদল পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে বলে অভিযোগ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘এক দিকে ভারতীয় জনতা পার্টি, অন্য দিকে নির্দল। বাংলায় তো বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস জোট করেছে। অনেক জায়গায় পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়া করে প্রার্থী দিয়েছে। যেখানে বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে, সেখানে সিপিএম প্রার্থী দেয়নি। আবার যেখানে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে, সেখানে আবার বিজেপি সিপিএম প্রার্থী দেয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এক দিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বিহারে বিজেপিকে হারাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে চলার কথা বলছেন। আর রবিনহুড অধীর চৌধুরী বাংলার শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ ও সুকান্ত মজুমদারের ভাষায় কথা বলছেন। অধীরের নিরাপত্তার দায়িত্ব অমিত শাহের বাহিনী, দিদির পুলিশের ওপর আস্থা নেই, দাদার পুলিশে আস্থা আছে। দাদার নাম নরেন্দ্র মোদী।’’
সভায় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি মানুষের গ্যারেন্টার। পটনার বিরোধী জোটের বৈঠকের পর বিজেপির মোদীর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। ১৬ দলের বৈঠক হয়েছে। তাই এখন এমন কথা বলছে। আমাদের লড়াই বিজেপি ও মোদীর বিরুদ্ধে নয়। আমাদের লড়াই, ভারতের সংবিধান ও গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই।’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী রিমোটের বোতাম টিপে বাংলার মানুষের টাকা বন্ধ করেছেন। আর বাংলার মানুষ ইভিএমের বোতাম টিপে দেশের প্রধানমন্ত্রী বদল করে দেবেন।’’