পিকে-প্রতিনিধির প্রশ্নবাণে জর্জরিত মন্ত্রী-বিধায়কেরা

এমন অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে! তা অবশ্য হয়েছে ‘দিদি’র সামনেই।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৪৫
Share:

—ফাইল চিত্র।

এক ‘পিকে’ কিছু দিন আগে রুপোলি পর্দা কাঁপিয়ে দিয়েছিল। সে ছিল বিনোদন-বিশ্বের পিকে। এখন এসেছেন রাজনীতি জগতের এক ‘পিকে’। সেই পিকে এবং তাঁর প্রতিনিধিদের দাপটে তটস্থ রাজ্যের অনেক মন্ত্রী-বিধায়ক-নেতা-নেত্রী। প্রশ্নের পর প্রশ্ন, জবাবদিহির ঝক্কি তো আছেই। মাঝেমধ্যে পিকে-প্রতিনিধির ধমকধামকও সইতে হচ্ছে তাঁদের।

Advertisement

এমন অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে! তা অবশ্য হয়েছে ‘দিদি’র সামনেই। কিন্তু এ বার পুরো ব্যাপারটাই চলছে মেঘের আড়ালে, অর্থাৎ ফোনে ফোনে। তবে কণ্ঠটি দিদি মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয়। অন্য প্রান্তের স্বর অপরিচিত। জানতে চেয়েও ওই স্বরের মালিকের পরিচয় জানতে পারছেন না দাপুটে নেতা-মন্ত্রীরাও। জবাব একটা মিলছে। সেই জবাব হল, ‘পিকে-র অফিস থেকে বলছি।’ পিকে মানে প্রশান্ত কিশোর। ফোনে অবশ্য পিকে-র পুরো নামটুকুও বলা হচ্ছে না।

‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির সবিস্তার তথ্য ছাড়াও ছবি তুলে প্রশান্ত কিশোরের অফিসে পাঠাতে হচ্ছে তৃণমূলের সব মন্ত্রী-বিধায়ক-নেতাকে। তাঁরা ছবি তুলে পাঠাচ্ছেনও। তবু ঝক্কির শেষ নেই। কিছু ক্ষণ আগে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি শেষ হয়েছে। অথচ ছবি পৌঁছয়নি পিকে-র অফিসে। কেন ছবি পাঠাননি মন্ত্রী? জবাব চাইলেন পিকে অফিসের প্রতিনিধি। আমতা আমতা করে ছবি পাঠানোর কথা বললেন মন্ত্রী। জানালেন, তিনি নন। তাঁর এক সহযোগীকে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ছবি ও তথ্য পাঠানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রীর জবাবে ‘সন্তুষ্ট’ নন ফোনের ও-প্রান্তের কণ্ঠ। বরং আমলা-অধস্তন নেতা-কর্মীদের পরামর্শদাতা ওই মন্ত্রীকেই তাঁর দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিলেন পিকে-র প্রতিনিধি। বললেন, ‘আপনি শুধু অন্য কাউকে ছবি পাঠানোর কথা বলেই দায়িত্ব শেষ করলেন! আপনার কি উচিত ছিল না, ছবিটা পৌঁছেছে কি না, দেখে নেওয়া?’ সে-কথার পাল্টা জবাব দেওয়ার সাহস অবশ্য দেখাননি মন্ত্রী।

Advertisement

বরং আরও একটি প্রশ্নের মুখে ভেবলে যাওয়ার অবস্থা হল পিকে অফিসের ফোন পাওয়া মন্ত্রীর। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হল, তিনি কর্মসূচির সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করেননি! কেন করেননি? মন্ত্রী বোঝানোর চেষ্টা করলেন, সাংবাদিক বৈঠকের সময় ঠিক করা হয়নি। সাংবাদিক বৈঠকের সময় নির্ধারণ করে জানিয়ে দেওয়া হবে। সঙ্গে সঙ্গে পিকে-র প্রতিনিধি বললেন, ‘টাইম ঠিক করে জানিয়ে দেবেন।’ তাতে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল শহরের লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা ওই মন্ত্রীর।

মন্ত্রীর মতো থতমত খাওয়ার পরিস্থিতি না-হলেও ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির ছবি পাঠানো নিয়ে ত্রুটি হলেই পিকে-র অফিস থেকে ধমক খেতে হচ্ছে মন্ত্রী-বিধায়কদের। জুটছে মৃদু ভর্ৎসনাও। এমনকি কর্মসূচির ছবি পাঠিয়ে দিয়েও রেহাই মিলছে না অনেক মন্ত্রী-বিধায়ক-নেতানেত্রীর। বরং অনেক ক্ষেত্রে কর্মসূচির পাঠানো ছবির সত্যতা যাচাইয়ের মধ্যেও পড়তে হচ্ছে তাঁদের অনেককে।

দিদির কাছে বকাঝকা খেলেও তা হত প্রকাশ্যেই। দিদিকে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে রেহাইও মেলে। কিন্তু অজানা কণ্ঠের কাছে একটা প্রশ্নের জবাব দিয়েই রেহাই মিলছে না। প্রশ্নমালায় জর্জরিত মন্ত্রী-নেতারা।

পিকে-র ‘ওয়ানওয়ে ট্র্যাফিকে’ কখনও কখনও ‘ছেড়ে দে ফোন, কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা হচ্ছে মন্ত্রী-বিধায়কদের!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement