Madhuparna Thakur

বিধানসভা ছেড়ে পরীক্ষা দিতে ছুট! রক্তে রাজনীতি আর স্বপ্নে অনেক কিছু, কী হতে চান ঠাকুর মধুপর্ণা

প্রয়াত বাবা ছিলেন সাংসদ। মা এখনও সাংসদ। দুই খুড়তুতো দাদা সাংসদ, বিধায়ক। এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। কাকা অতীতে তৃণমূলের মন্ত্রীও ছিলেন। সেই বাড়ির প্রথম মেয়ে মধুপর্ণা ঠাকুর রাজনীতিতে থেকেও অন্য স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে চান।

Advertisement

সারমিন বেগম

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪ ১৮:৩৪
Share:

মধুপর্ণা ঠাকুর। —ফাইল ছবি।

বয়স তো সবেই ২৫। এখন কি আর বিধানসভার আলোচনায় মন বসে! কিন্তু উপায় তো নেই! ঠাকুরনগরের সদ্য স্নাতক মেয়েটি যে এখন বাগদার বিধায়ক। মধুপর্ণা ঠাকুরের স্নাতকোত্তর লেখাপড়া চলছে। সেই সঙ্গে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ। উপনির্বাচনে জিততে না-জিততেই বিধানসভায় বাদল অধিবেশন। আসতে তো হবেই। আবার এ সবের মধ্যে পরীক্ষাও রয়েছে। দোটানায় থাকা মধুপর্ণা শুক্রবার শ্যাম ও কুল দুই-ই রাখলেন। বিধানসভায় প্রথমার্ধ কাটিয়ে ছুটলেন হাবড়ায়। সবাই ভাবলেন নতুন বিধায়ক এত তাড়াতাড়ি আসন ছাড়লেন কেন? পরে জানা যায়, কম্পিউটারের একটি কোর্স সবেই শেষ হতে চলেছে। আর শুক্রবার বিকেলেই ছিল পরীক্ষা। উত্তরপত্র জমা দেওয়ার পরে পরেই আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন, ভালই হয়েছে পরীক্ষা।

Advertisement

শুক্রবার ছিল লিখিত পরীক্ষা। সেটা না হয় বিধানসভা থেকে ছুটি নিয়ে মেটানো গিয়েছে। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয়েছিল প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা দেওয়া। মধুপর্ণা বললেন, ‘‘ভোটঘোষণা হয়ে যেতেই প্রচার শুরু করে দিতে হয়। কিন্তু তার মধ্যেই ছিল প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা। দলের সবাইকে জানিয়ে, আমি পরীক্ষাটা ঠিক দিয়ে এসেছি। তবে বাড়ি না ফিরে সোজা প্রচারে চলে যাই।’’ রাজনীতিতে নামার সুযোগ, প্রার্থী হয়ে যাওয়া, প্রচার পর্ব, জয়, শপথগ্রহণ সব কিছু মিলিয়ে ঝড়ের মতোই ছিল মধুপর্ণার গত মাসখানেকের জীবন। তার মধ্যেই স্বপ্নপূরণের ইচ্ছেটা খচখচ করেছে প্রতি দিন। তাই সব সামলে নিয়মিত পড়তে বসা, নির্দিষ্ট দিনে পরীক্ষা দেওয়া সবই করে যেতে হচ্ছে। ফারাক শুধু একটাই। সেটাই বড় ফারাক। ঠাকুরনগর থেকে যে মেয়েটা এত দিন হাবড়ার যুব কেন্দ্রে যেতেন লোকাল ট্রেন চেপে, তিনি এখন যাচ্ছেন গাড়িতে চেপে। শুক্রবার যেমন পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন ‘এমএলএ’ স্টিকার লাগানো সাদা গাড়ি নিয়ে।

মধুপর্ণার বাবা কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ। বাবার মৃত্যুর পরে মা মমতাবালা ঠাকুরও লোকসভায় সাংসদ হয়ে যান। এখন রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ। মধুপর্ণার কাকা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরও তৃণমূলের বিধায়ক এবং মন্ত্রী হন। একটা সময়ে এই পরিবারের সকলেই তৃণমূলে ছিলেন। এখন অবশ্য খুড়তুতো দাদার এক জন বিজেপি বিধায়ক (সুব্রত ঠাকুর) আর এক জন টানা দু’বার বিজেপির সাংসদ (শান্তনু ঠাকুর) হয়ে কেন্দ্রের মন্ত্রী (যদিও দুই দাদার সঙ্গে রাজনৈতিক এবং আত্মিক দূরত্ব এখন কয়েক যোজনের)। এমন মেয়ের রক্তে রাজনীতি থাকারই কথা। মধুপর্ণা নিজেও সেটা মনে করেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতিতে তো আসতেই হত। আমাদের রক্তে রাজনীতি রয়েছে। তা-ও চাকরির কথা আমার মাথায় ছিল। আর পড়াশোনা তো করতেই হবে। এমএ হয়ে গেলে পিএইচডি করতে চাই।’’ আর আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চান বলে সাধারণ লেখাপড়ার পাশাপাশি অনেক আগে থেকেই কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। আগেই আইটিতে অ্যাডভান্স ডিপ্লোমা হয়ে গিয়েছে। এ বার ট্যালি নিয়ে কোর্স শেষের পথে।

Advertisement

মধুপর্ণা দশম স্তর পর্যন্ত লেখাপড়া করেন মহারাষ্ট্রের নাগপুরে। এর পরে সল্টলেকের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়। ঠাকুরপুকুরের পিআর ঠাকুর কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বার স্নাতকোত্তর লেখাপড়া। মাঝে কলেজে চাকরির জন্য নেটের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। তবে এখন রাজনীতির চাপ অনেক। মধুপর্ণা বললেন, ‘‘এখন বাগদার মানুষের জন্য কাজ করা আমার প্রথম দায়িত্ব। কারণ তাঁরা আমার উপরে ভরসা রেখেছেন। তবু লেখাপড়া চালিয়ে যেতেই চাই।’’

বাড়ির প্রায় সকলেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাঁর সঙ্গে দূরত্বই ছিল। লোকসভা নির্বাচনের আবহে ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক গোলমালের মধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয় শান্তনু এবং মধুপর্ণার মা মমতাবালার গোষ্ঠীর মধ্যে। দাদা শান্তনুর বিরুদ্ধে অনশনে বসেন। দ্বাদশ দিনের মাথায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হতে হয় তাঁকে। সেই সময়েই রাজ্য রাজনীতির নজরে আসেন ঠাকুরবাড়ির এই মেয়ে। ‘লড়াকু’ হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে সম্ভবত সেই সময়েই এসে যান মধুপর্ণা। এর আগে ঠাকুরবাড়ির পুত্রবধূ হিসাবে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন মমতাবালা। আর মধুপর্ণা ওই বাড়ির প্রথম কন্যা, যিনি বিধায়ক। আগামী কেমন হবে? রক্তে থাকা রাজনীতিই চলতে থাকবে না কি স্বপ্নে থাকা শিক্ষকতা কিংবা গবেষণা? মধুপর্ণা বললেন, ‘‘গো উইথ ফ্লো।’’ জীবন যে দিকে নিয়ে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement