গ্রেফতারির পর নিজাম প্যালেসে নিয়ে আসার জন্য সিবিআইয়ের গাড়িতে তোলা হচ্ছে জীবনকৃষ্ণকে। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় ৬৫ ঘণ্টা তল্লাশি চালানোর পর, নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। সোমবার ভোর সওয়া ৫টা নাগাদ গ্রেফতার করা হয়েছে তৃণমূল বিধায়ককে। জীবনকৃষ্ণকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হবে দূর্গাপুরের সিবিআই ক্যাম্পে। ওই ক্যাম্পে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে। সেখান থেকে নিজাম প্যালেসের উদ্দেশে জীবনকৃষ্ণকে নিয়ে রওনা দেবেন সিবিআই আধিকারিকরা। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তদন্তে অসহযোগিতা ও তথ্য প্রমাণ লোপাট করার চেষ্টা, মূলত এই দুই অভিযোগে প্রাথমিকভাবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ জীবনকৃষ্ণের বড়ঞার বাড়িতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি দল। তল্লাশি চালানো হয় তাঁর অফিস-সহ একাধিক জায়গায়। সিবিআই সূত্রে খবর সেই তল্লাশি চলাকালীন, তৃণমূল বিধায়কের বাড়ি থেকে তাঁর সুপারিশে হওয়া চাকরিপ্রার্থীদের নথির পাশাপাশি এসএলএসটির গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ডেটাবেসই পাওয়া গিয়েছে। সব মিলিয়ে উদ্ধার হয়েছে প্রায় দু’বস্তা নথি। সিবিআইয়ের একটি সূত্র দাবি করছে, তৃণমূল বিধায়কের বাড়ি থেকে প্রায় ৩,৪০০ প্রার্থীর তথ্য উদ্ধার হয়েছে। যার মধ্যে নাকি রয়েছে নবম এবং দশম শ্রেণির চাকরিপ্রার্থীদের নাম এবং রোল নম্বর সমেত বহু নথি।
শুক্রবার বিধায়কের দু’টি নোটপ্যাডও বাজেয়াপ্ত করা হয়। সিবিআইয়ের সূত্রে খবর, বাড়ির একটি ঘরকেই নিয়োগ দুর্নীতির আস্তানা বানিয়ে রেখেছিলেন জীবনকৃষ্ণ। সেই ঘরকে ‘ওয়ার রুম’ বলছেন তদন্তকারীরা। সিবিআইয়ের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ঘরটিতে একাধিক কম্পিউটার, বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ, তিনটি নোটপ্যাড, হাই স্পিড ইন্টারনেট সংযোগ এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু সফ্টঅয়্যারের খোঁজ পাওয়া যায়। কী কাজে এই ঘর ব্যবহার হত, সে বিষয়ে বিধায়ককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একটি সিঁদুর কৌটোর মধ্যে জীবনকৃষ্ণ মোবাইলের মেমরি কার্ড লুকিয়ে রেখেছিলেন বলেও সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।
সিবিআইয়ের দাবি, জীবনকৃষ্ণ নিয়োগ দুর্নীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তাঁর মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির বহু টাকার লেনদেন হত বলেও অনুমান করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তকারীরা।
জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগও আনে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় শুক্রবার বিকেলের দিকে অসুস্থতার কথা বলে শৌচালয়ে যাওয়ার নাম করে গিয়ে নিজের দু’টি মোবাইল বাড়ির পিছনের পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন তিনি। ছোড়েন দু’টি পেনড্রাইভ এবং একটি হার্ডডিস্কও। সেগুলিরও খোঁজ চালানো হচ্ছিল। প্রায় ৩২ ঘণ্টা তল্লাশির পর একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়।
তবে জীবনকৃষ্ণ যে গ্রেফতার হতে পারেন, তার খানিক আঁচ শনিবার সকাল থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। সকাল থেকে জীবনকৃষ্ণের দুই আত্মীয়ের বাড়িতেও নতুন করে তল্লাশি চালাতে শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকেরা। পুলিশের যে ভ্যান দু’টি শুক্রবার রাতে চলে গিয়েছিল, তার মধ্যে একটি শনিবার সকালে আবার তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির বাইরে আনা হয়। একই সঙ্গে তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির সামনে শনিবার সকাল থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি সকাল থেকে মোতায়েন করা হয়েছিল রাজ্য পুলিশকেও।
প্রসঙ্গত, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই নিয়ে তিন তৃণমূল বিধায়ককে গ্রেফতার করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর আগে বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় (গ্রেফতারের পর পার্থকে মন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সমস্ত দলীয় পদ থেকেও তাঁকে সরানো হয়েছে।) এবং পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। দু’জনেই বর্তমানে জেলবন্দি। সেই তালিকাতেই নয়া সংযোজন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ।