সম্রাট পালের দলবলের সঙ্গে (ডান দিকে) প্রকাশ দাসের গোষ্ঠীর কোন্দলের জেরেই কৃষ্ণনগরে বোমাবাজি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের। —নিজস্ব চিত্র।
কৃষ্ণনগর পুরএলাকায় রাতভর বোমাবাজির ঘটনাকে তৃণমূলের এক স্থানীয় কাউন্সিলরের ‘বাঁদরামি’ বলে আখ্যা দিলেন রাজ্যের মন্ত্রীর উজ্জ্বল বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের বাঁদর কাউন্সিলর বাঁদরামো করে পটকা ফাটিয়েছেন।’’ এই ঘটনা তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দলের জের বলেই দাবি স্থানীয়দের একাংশের। যদিও অভিযুক্ত দুই গোষ্ঠীর দাবি, এটি দুষ্কৃতীদের কাজ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ নদিয়ার কোতোয়ালি থানার কৃষ্ণনগর পুরএলাকায় ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে রাতভর ব্যাপক বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। ওই ওয়ার্ডের নগেন্দ্রনগর এলাকায় স্থানীয় এক তৃণমূলকর্মী বনমালী মোদকের বাড়িতে তাঁর ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠান চলাকালীনই আচমকাই তাঁর বাড়ি লক্ষ্য করে ব্যাপক বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। মুহুর্মুহু বোমার শব্দে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। কয়েক মিনিটের মধ্যেই কার্যত সুনসান হয়ে পড়ে গোটা নগেন্দ্রনগর। কিছু ক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে কোতোয়ালি থানার পুলিশবাহিনী। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রকাশ দাস এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পলাশ দাসের সঙ্গে তাঁর ‘বিরোধী’ তথা তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের নেতা সম্রাট পালের গোষ্ঠীর এলাকা দখলের লড়াইয়ের জেরেই বোমাবাজি হয়েছে। যা ঘিরে কার্যত সন্ত্রস্ত গোটা এলাকা।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী উজ্জ্বলের অনুগামী বলে পরিচিত সম্রাট পাল। অন্য দিকে, প্রাক্তন টাউন তৃণমূলের সভাপতি শিশির কর্মকারের ঘনিষ্ঠ বলে নাম রয়েছে প্রকাশ এবং পলাশের। শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই বোমাবাজি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। বোমাবাজি ও পাল্টা আক্রমণের অভিযোগে উত্তপ্ত নগেন্দ্রনগর এলাকায় রাত থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তৃণমূলের এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। পুরভোট এবং টাউন সভাপতি নির্বাচনকে ঘিরে তা চরমে পৌঁছেছে। বোমাবাজি চলাকালীন ঘটনাস্থলে পৌঁছন পলাশ। তাঁর দাবি, ‘‘বনমালী আমাদের সক্রিয় কর্মী। তাঁর বাড়িতে দুষ্কৃতীরা আক্রমণ চালিয়েছেন।’’ একই দাবি করেছেন সম্রাট। বোমাবাজিতে তাঁর কোনও হাত নেই বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। কিছু দুষ্কৃতীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’’
বস্তুত, নদিয়া সফরে এসে জেলার নেতাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সে সফরের পর সপ্তাহখানেক গড়াতেই শাসকদলের কোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। যার জেরে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় নদিয়া জেলা নেতৃত্ব। বোমাবাজির ঘটনা নয়। বরং একে ‘পুজোর সময় আনন্দ করে পটকা ফাটানোর ঘটনা’ বলে দাবি করেছেন উজ্জ্বল। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বাঁদর কাউন্সিলর বাঁদরামো করে পটকা ফাটিয়েছেন।’’
তৃণমূলের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এলাকার মানুষজন সমস্যায় পড়ছেন বলে দাবি বিজেপির। বিজেপির জেলা মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের ফলে জেরবার সাধারণ মানুষ। ওদের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে গন্ডগোল। তাতে ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’’