বেতন কেটে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লেন কারামন্ত্রী অখিল গিরি। ফাইল চিত্র।
মহার্ঘ্য ভাতা (ডিএ)-র দাবিতে যে সব সরকারি কর্মচারীরা আন্দোলন করছেন, তাঁদের বেতন কেটে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লেন কারামন্ত্রী অখিল গিরি। তাঁর মন্তব্যের পাল্টা, মন্ত্রী বাড়ির সামনেই প্রতিবাদ মিছিল করে ধর্নায় বসার হুঁশিয়ারি দিল সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। রবিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে জেলাশাসকের দফতরের সভাঘরে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই অখিল বলেন, “যাঁরা ডিএ-র দাবিতে ধর্নায় বসেছেন তাঁরা তো নিজেদের ডিউটি করছেন না। তাঁরা যেন বেতন না পান। মুখ্যমন্ত্রী নিজে দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ভূমি দফতর এবং ফার্মেসি দফতরের কর্মচারীদের কাজে তিনি অখুশি। আমি নিজেই তিন-চারটি বিএলআরও-র নাম দিয়ে এসেছি বদলি করার জন্য।’’ এ কথা বলেই ক্ষান্ত হননি কারামন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, “অফিস করবে না, দিনের পর দিন কামাই করবে। আর বেতন নিয়ে নেবে? বেতন কেটে নেওয়া হোক। অফিস করো, কাজ করো, বেতন নাও। দিনের পর দিন অফিস কামাই করে ধর্নায় বসছে, আন্দোলন করবে। দায়িত্ব পালন না করে, অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে হবে না।”
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে মন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে আন্দোলনকে আরও জোরদার করার কথা বলেছে। তাঁদের তরফে ভাস্কর ঘোষ বলেন, ‘‘এই রাজ্য সরকারে যে সব মন্ত্রী রয়েছেন, তাঁদের রুচিবোধ বা জ্ঞান, কোনওটাই নেই। একজন মন্ত্রীর জানা উচিত, সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ছুটি থেকে ছুটি নিয়ে কেউ যদি আন্দোলন করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।’’ এরপরেই সুর চড়িয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে মন্ত্রী আমাদের বেতন কেটে দেখান। তিনি যদি তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা না করেন, তাহলে তাঁর বাড়ির বাইরে আমরা প্রতিবাদ মিছিল এবং অবস্থান করব।’’অখিলের এমন মন্তব্যের পাল্টা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চও। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ আবার গত ১০৯ দিন ধরে ডিএ-র দাবিতে শহিদ মিনারে অবস্থান করছে। ইতিমধ্যে তারা কর্মবিরতির পাশাপাশি, প্রশাসনিক ধর্মঘট করেছে। দিল্লিতে গিয়েও ধর্না অবস্থান করে এসেছে। তাতেও ডিএ সমস্যার সমাধান হয়নি। কো-অর্ডিনেশন কমিটি ধারাবাহিক ধর্না না করলেও কর্মবিরতি এবং প্রশাসনিক ধর্মঘটে অংশ নিয়েছে। কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকার যদি নিজের দায়িত্ব পালন করে পূর্ণাঙ্গ ডিএ দিয়ে দিত, তাহলেই আর কোনও সমস্যা থাকত না। সরকারি কর্মচারীরা ন্যায্য পাওনার দাবিতে আন্দোলন করছেন। আর রাজ্যের একজন মন্ত্রী তাঁদের আন্দোলনকে কটাক্ষ করে বিবৃতি দিচ্ছেন। এর থেকেই বোঝা সম্ভব রাজ্য সরকার কর্মচারীদের দাবিদাওয়ার প্রশ্নে কী মনোভাব নিয়ে চলছে।’’
উল্লেখ্য, এর আগে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ঘিরে মন্তব্যের জেরে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক অখিল। সেই ঘটনার জেরে দুঃখ প্রকাশ করতে হয়েছিল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে।