জ্ঞানের পরীক্ষা তৃণমূলে, ফেল করলে টিকিট মিস

দু’টাকার চাল তো মিলছে, কিন্তু প্রকল্পটা? মাখা চুলকোচ্ছে ছেলেটি। হাতে ধরা দলীয় পতাকায় ঝলমলে ঘাসফুল। কিংবা ‘লোক প্রসার প্রকল্প’টা সম্পর্কে ধারনা করতে পারছেন না সার দিয়ে দাঁড়ানো কর্মীরা। তা হলে?

Advertisement

সুস্মিত হালদার

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৭ ১১:৩০
Share:

দু’টাকার চাল তো মিলছে, কিন্তু প্রকল্পটা?

Advertisement

মাখা চুলকোচ্ছে ছেলেটি। হাতে ধরা দলীয় পতাকায় ঝলমলে ঘাসফুল। কিংবা ‘লোক প্রসার প্রকল্প’টা সম্পর্কে ধারনা করতে পারছেন না সার দিয়ে দাঁড়ানো কর্মীরা। তা হলে?

দলে ভিড়লেই হবে না।

Advertisement

মাস খানেক দলনেত্রী জানিয়েছিলেন, স্থানীয় স্তরের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক শিক্ষাটা বড্ড দরকার। দল ও সরকারের কাজকর্ম সম্পর্কে তাঁদের অবগত থাকতে হবে। তবেই বিরোধীদের মোকাবিলা করা সম্ভব।

এ বার দলনেত্রীর সেই কথা মতো রীতমতো প্রশ্নপত্র বিলি করে পরীক্ষা নেওয়া হল নেতাদের।

রবিবার রানাঘাটে দলের পঞ্চায়েত সম্মেলনে দেখা গেল, ভিতরে রীতিমতো পরীক্ষার পরিবেশ। ঘরের ভিতরে সুনসান পরিবেশ। প্রত্যেকের হাতে প্রশ্নপত্র। সেখানে গোটা পঞ্চাশেক প্রশ্ন। উত্তর লিখতে হবে সেখানেই। স্বেচ্ছাসেবকেরা হল জুড়ে পায়চারি করছেন। পাছে যেন কেউ এ দিক সে দিকে উঁকিঝুঁকি না মারেন।

কী নেই সেই প্রশ্নে! কত টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে ‘মা মাটি মানুষের’ সরকার ক্ষমতায় এসেছিল? কোন প্রকল্পের মাধ্যমে ২ টাকা কেজি দরে চাল-গম দেওয়া হয়? ওই প্রকল্পের মাধ্যমে কত লোক উপকৃত হয়েছেন? ‘লোক প্রসার প্রকল্পে’ কারা উপকৃত হয়েছেন?

এমনই সব চোখা চোখা প্রশ্নের উত্তর দিতে হল জনপ্রতিনিধিদের। দুরুদুরু বুকে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেড়িয়ে এসে অনেকেই তাই বলছেন, “এই বয়সে পরীক্ষা? কত প্রশ্নেরই উত্তর জানা নেই। তবে ঠিক হোক বা ভুল, কোন প্রশ্নই ছেড়ে আসিনি।”

আর পাঁচটা সম্মেলনের মতোই মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই পঞ্চায়েত রাজ সম্মেলনে এসেছিলেন তৃণমূলের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জন প্রতিনিধিরা। কিন্তু ভিতরে ঢুকেই চমকে গেলেন তাঁরা। একি? এটা সম্মেলন? নাকি পরীক্ষার হল? সম্মেলন শুরুর আগেই প্রত্যেকের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল প্রশ্নপত্র। জানিয়ে দেওয়া হল, সম্মেলন শেষের আগেই উত্তরপত্র ফেরত দিতে হবে স্বেচ্ছাসেবকদের। সকলে অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন সেই নির্দেশ। প্রধান ‘ইনভিজিলেটর’ যে স্বয়ং দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

বেগোপাড়ায় এই সম্মেলনে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে অনেকেরই মাথা ঘুরে গেল। সম্মেলন শেষে গজগজ করছিলেন এক প্রধান। তিনি বললেন, “আমি দু’বারের প্রধান। আমারই অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। তাহলে বুঝুন প্রথম বারের সদস্যদের কী অবস্থা!’’

জেলা নেতারা জানাচ্ছেন, বছর খানেকের মধ্যেই পঞ্চায়েত ভোট। সেখানে প্রচারে সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। নিচু তলার নেতা, জনপ্রতিনিধিদের সরকারের সাফল্যের দিকগুলি সম্পর্কে অবহিত থাকতে হবে। না হলে তাঁরা কী ভাবে মানুষের কাছে সরকারের বার্তা পৌঁছে দেবেন। তাই পঞ্চায়েত সদস্যদের দুর্বলতা চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাঁদের সে ভাবে ভোটের আগে তৈরি করা হবে। জেলা সভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস বলছেন, “আমরা চাইছি মানুষের কাছে সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে। তার আগে জনপ্রতিনিধিদের কাছে পুরো বিষয়টা পরিষ্কার থাকা দরকার। তাই এই বন্দোবস্ত।”

জেলা পরিষদের সভাধিপতি বাণীকুমার রায় বলছেন, “এর ফলে নিচুতলার কর্মী বা সাধারণ পঞ্চায়েত সদস্যরা দল সম্পর্কে কতটা খোঁজ রাখেন, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’

১৮৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ১৭টি পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের সদস্যদের উত্তরপত্র যাচাই করবেন জেলা নেতারা। পরে তা পাঠানো হবে রাজ্যে। ফলে অনেকেই সদস্যই এখন থেকে চাপে পড়ে গিয়েছেন।

এরই মধ্যে এ দিন বাণীকুমার রায় নতুন করে একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি জানান, এখন থেকে ব্লক স্তরেও এমন সম্মেলন করা হবে। স্থানীয় নেতাদের শেখাবেন জেলা নেতারা।

আপাতত অবশ্য ফল প্রকাশের অপেক্ষায় পঞ্চায়েত সদস্যেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement