বেআইনি ভাবে কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ। জগৎবল্লভপুরে। নিজস্ব চিত্র
আমপানে অসংখ্য গাছ নষ্ট হয়েছে গ্রামীণ হাওড়ায়। অথচ, সংরক্ষণের পরিবর্তে তিনটি গাছ (পাকুড়, দেবদারু এবং অশ্বত্থ) গাছ বেআইনি ভাবে কেটে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের শঙ্করহাটি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের সুমিত্রা পণ্ডিতের বিরুদ্ধে। গাছগুলি ছিল পঞ্চায়েত অফিসের কাছেই মুন্সিরহাটে পূর্ত দফতরের জমিতে। তিনটি গাছের বাজারদর অন্তত এক লক্ষ টাকা বলে বন দফতরের দাবি।
কিছুদিন আগেই পাশের জেলা হুগলির হরিপালের আশুতোষ পঞ্চায়েতের প্রধান সুমিত সরকারের বিরুদ্ধে এলাকার গ্রামীণ হাসপাতালে ভেঙে পড়া মেহগনি, শিরীষ-সহ বেশ কিছু গাছ বেআইনি ভাবে কেটে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগকে ঘিরে শোরগোল হয়। সুমিত্রার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ আরও গুরুতর। কারণ, গাছগুলি আস্ত ছিল বলে এলাকাবাসীর দাবি। তাঁরা জানান, মৌখিক ভাবে বিষয়টি ব্লক প্রশাসনকে জানিয়েছেন। শীঘ্রই লিখিত অভিযোগ জমা দেবেন। তাঁদের আশঙ্কা, প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ওই জমির বাকি গাছও সাফ হয়ে যাবে।
বিডিও রঞ্জনা রায় বলেন, ‘‘আমাকে একাধিক সূত্র থেকে কিছু ছবি পাঠানো হয়েছে। তবে, লিখিত ভাবে কেউ কিছুই জানাননি। যে ছবিগুলি এসেছে তার ভিত্তিতেই প্রাথমিক খোঁজখবর নিচ্ছি।’’
গাছ কাটার কথা স্বীকার করেছেন প্রধান। তাঁর দাবি, ‘‘ওই জমির একাংশে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে একটি শৌচাগার তৈরি হবে। তাই পঞ্চায়েতের তহবিল থেকে খরচ করে আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত দু’টি গাছ কাটা হয়েছে। তিনটি নয়। বন দফতর ফোনে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। তাই কোনও বেআইনি কাজ করিনি। কাটা গাছ বিক্রিও করিনি।’’
কাটা গাছগুলি তা হলে কোথায় গেল, সেই প্রশ্নের উত্তর প্রধান এড়িয়ে গিয়েছেন। পঞ্চায়েতের একটি সূত্রের দাবি, গাছ কাটার খরচ পঞ্চায়েতের তহবিল থেকে বরাদ্দ করা হয়নি। গ্রামবাসীরা জানান, গত মঙ্গলবার গাছগুলি কাটা হয়। এক ব্যবসায়ী গাছগুলি নিয়ে যান। দেবদারু ও পাকুড় গাছ দু’টি অন্তত ৪০ বছরের পুরনো। অশ্বত্থ গাছটির বয়স একশো বছরেরও বেশি।
আরও পড়ুন: ১০০, ১০০০... ‘প্রণামী’ লাগবে!
প্রধান বন দফতরের অনুমতি মিলেছে দাবি করলেও ওই দফতর সে কথা মানেনি। দফতরের হাওড়া রেঞ্জ অফিসের এক আধিকারিক জানান, প্রধান কয়েকদিন আগে আবেদন করায় তাঁকে বলা হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত গাছ পঞ্চায়েতকে সরানোর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে দিয়ে সরাতে হবে। কাটতে হলে যাদের জমিতে গাছ রয়েছে, তাদেরই আবেদন করতে হবে। পূর্ত দফতর কোনও আবেদন করেনি। দেবদারু গাছটির দাম অন্তত ৪০ হাজার টাকা হবে। বাকি দু’টি গাছের দাম হবে গড়ে ৩০ হাজার টাকা করে।
আরও পড়ুন: ‘বাধ্যতামূলক’ পরীক্ষা রদের আর্জি বাংলার
পূর্ত দফতরের জমিতে প্রধান শৌচাগার তৈরির পরিকল্পনা করলেও ওই দফতরের কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। প্রধানের দাবি, ‘‘অনুমতি বিডিও এনে দেবেন বলে আমাকে কথা দিয়েছেন।’’ বিডিও বলেন, ‘‘শৌচাগার তৈরির বিষয়টি আমি জানিই না।’’