মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী ওই গ্রামে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশ এবং তার পরেই আনারুলের ধরা পড়া ইস্তক সে নিয়ে মুখে কুলুপ জেলার তৃণমূল নেতাদের। ভাবখানা এমন, কে আনারুল?
আনারুল হোসেন ফাইল চিত্র।
বাঘে ছুঁলে নাকি আঠারো ঘা, পুলিশে ছুঁলে আটান্ন। আনারুল ছুঁলে কত ঘা?
বীরভূম জেলা তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশই এই নিয়ে মুচকি হেসে কথা বলছেন। বলার কারণও আছে। বগটুই-কাণ্ডের পরে পরেই দলের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে যাঁকে পাঠানো হয়েছিল, সেই নেতার পাশেও আনারুল হোসেনকে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু, তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী ওই গ্রামে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশ এবং তার পরেই আনারুলের ধরা পড়া ইস্তক সে নিয়ে মুখে কুলুপ জেলার তৃণমূল নেতাদের। ভাবখানা এমন, কে আনারুল?
আনারুলকে এখন দল ‘ঝেড়ে’ ফেলতে চাইছে বলে দাবি ওই নেতার অনুগামীদেরও। এই নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ রয়েছে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলেরও বিরুদ্ধেও। গত বৃহস্পতিবার আনারুলকে গ্রেফতার করার জন্য রামপুরহাটের সন্ধিপুরে, তাঁর বাড়িতে পুলিশ যেতেই সেখানে জড়ো হয়ে তাঁর নামে স্লোগান তুলেছিলেন ওই অনুগামীরা। তাঁদের কয়েক জন এমন দাবিও করছেন, দলের একাংশই এই ঘটনায় শুধুমাত্র আনারুলকে ‘ফাঁসিয়ে’ দিয়েছে। এক অনুগামী বলেন, ‘‘এত দিন আনারুলদাকে ভাঙিয়ে কত জন কত কিছু করে নিল। এখন ধরা পড়তেই সব মুখ ফিরিয়েছে!’’
ঘটনা হল, এই সে দিনও আনারুলকে যাঁরা পাশে নিয়ে চলছিলেন, সেই নেতারাও এখন আনারুলের নাম শুনলেই ‘বিষয়টি জেলা নেতৃত্ব দেখছেন’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। কেউই আনারুল নিয়ে কথা বলে শীর্ষ নেতৃত্বের ‘কোপ’-এ পড়তে চাইছেন না। মুখ্যমন্ত্রী বগটুইয়ে যাওয়ার পরে পরেই রামপুরহাট ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় আনারুলকে। যাঁকে নতুন ব্লক সভাপতি করা হয়েছে, কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আসা সেই নেতা সৈয়দ সিরাজ জিম্মি এ নিয়ে কোনও কথা বলতেই রাজি হননি। আনারুলের সঙ্গে নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিতে যাঁকে বহুবার দেখা গিয়েছে, দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিউসি-র সেই জেলা সভাপতি ত্রিদিব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ সব নিয়ে জেলা নেতৃত্বকে জিজ্ঞাসা করুন।’’ রামপুরহাটের বিধায়ক তথা ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘আনারুল নিয়ে কিছু বলব না।’’
সোমবার বোলপুরে দলের জেলা কমিটির মিটিংয়েও আনারুল প্রসঙ্গ ওঠেনি বলেই তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানালেন, বৈঠকের শুরুতে বগটুই গ্রামে নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হলেও দলের দীর্ঘদিনের ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের নামই ওঠেনি। দলের জেলা সহ-সভাপতি তথা লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘আনারুল এখন বিচারাধীন মামলায় সিবিআই হেফাজতে। সুতরাং তাঁর প্রসঙ্গ স্বাভাবিক ভাবেই দলের জেলা কমিটির মিটিংয়ে আনা হয়নি। পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি-সহ দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’’