দোকান খোলার জন্য করজোড়ে আবেদন মানস মজুমদারের (বাঁ দিকে)। পরে দোকান খুলে দেওয়া হয়। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
এ যেন এক ব্যতিক্রমী ছবি!
শাসক দলের এক নেতা দাঁড়িয়ে থেকে বিজেপি নেতার বন্ধ করে দেওয়া দোকান খোলালেন! শাসক দলের আর এক নেতাকে দেখা গেল বিজেপি নেতার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে নির্বিঘ্নে থাকতে পারার আশ্বাস দিতে!
ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস দেখতে অভ্যস্ত আরামবাগ। এ বার ভোটের ফল প্রকাশের পরেও সেই হিংসা থামেনি। মহকুমা জুড়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে নানা জায়গায় হামলার অভিযোগ উঠছিল। শুরু হয়েছিল নিন্দা আর সমালোচনার ঝড়। তা সামলাতে অবশেষে বুধবার মাঠে নামলেন তৃণমূল নেতারা। যা দেখে কিছুটা আশ্বস্ত বোধ করছে বিরোধী পক্ষ। তবে, হিংসা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
গোঘাটের কামারপুকুর চটিতে গত রবিবার বিকেলে শুভজিৎ লাহা নামে এক বিজেপি নেতার মিষ্টির দোকান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তারপর আর দোকান খুলতে পারেননি শুভজিৎ। বুধবার এই বিধানসভা কেন্দ্রের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী মানস মজুমদার দাঁড়িয়ে থেকে দোকান খুলে দেওয়ায় শুভজিৎ খুশি। তিনি বলেন, “শুধু নিজের দোকান খুলতে পারলাম তাই নয়, রাজনীতির সুষ্ঠু সংস্কৃতি ফেরাতে প্রাক্তন বিধায়কের এই উদ্যোগ সব দলকেই উৎসাহিত করবে।”
গত মঙ্গলবার দুপুরে আবার পুরশুড়ার সোঁয়ালুকে বিজেপি নেতা পলাশ মাইতির বাড়ি ভাঙচুর এবং তাঁর স্ত্রী সীমাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পাড়ার দু’টি নলকূপও ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। গ্রামবাসীর চাপে ওই দিন বিকেলেই নলকূপ দু’টি সারানো হয়। বুধবার পুরশুড়ার পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব সরাকরি পলাশের বাড়ি যান। দিলীপের আশ্বাসে পলাশ আপ্লুত। তিনি বলেন, “আমার আর্থিক ক্ষতি হয়তো মিটল না, কিন্তু দিলীপবাবুর পাশে থাকার আশ্বাসে মানসিক ভাবে অনেকটাই শান্তি পেয়েছি, সাহস পেয়েছি।” দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন দিলীপ।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলেন, “কোথাও কোন অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। কোনও গোলমালের সঙ্গে দলের যে স্তরের নেতাই থাকুক, তাদের গ্রেফতার করতে বলেছি। গোঘাটের বন্ধ দোকান মানস খুলিয়েছেন। খানাকুল, আরামবাগের অশান্তিগুলির ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তেরা দ্বিধা না করে সরাসরি আমাকে জানান। আধ ঘণ্টার মধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”
শাসক দলের এই পদক্ষেপ সত্ত্বেও হিংসা কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এ দিন সকালেই আরামবাগের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি প্রতিষ্ঠিত বস্ত্র বিপণির মালিক বিজেপি সমর্থক, এই সন্দেহে দোকান ভাঙচুর হল। দোকানের মালিক রুমি বেগমের অভিযোগ, “সরাসরি কোনও রাজনীতি করিনি। তা সত্ত্বেও দোকানে এবং আমার উপর হামলা হল। বিষয়টা পুলিশ এবং তৃণমূল নেতৃত্বকে জানিয়েছি।” দিলীপ বলেন, “শেখ রাকেশ আলি নামে যার নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে, তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে পুলিশকে।’’ পুলিশ জানায়, অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
এ ছাড়াও গোঘাটের শ্যাওড়া, শ্যামবাজার, আরামবাগের কড়ুই, পুইন, তিরোল, খানাকুলের হরিশচক, নতিবপুর, বলপাই, পুরশুড়ার সোদপুর এবং ডিহিবাতপুরে ছোটখাটো মারধর ও হুমকির অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এর পাশাপাশি, মঙ্গলবার সকালে গোঘাটের বলিভদ্রতে গোঘাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা হরেরাম রায়ের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে দলেরই ছেলেদের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করতে গেলে হরেরামের স্ত্রী কাকলিকেও মারধর এবং হাতে টাঙির কোপ মারার আভিযোগ ওঠে। হরেরাম বলেন, “ভোটে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলে দলেরই কিছু কর্মী-সমর্থক আমাকে এবং স্ত্রীকে মারধর করল। ঘর, মোটরবাইক ভাঙচুর করল। জেলা নেতৃত্বকে বলেছি।”