Pradhanmantri Awas Yojona

আবাসে নাম কাটাতে সক্রিয় তৃণমূল নেতারা

চূড়ান্ত তালিকার আগে এখন চলছে যাচাই পর্ব। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি থেকে ছোট-বড় নেতাদের আবাস প্লাস থেকে নাম কাটানোর প্রবণতা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫১
Share:

চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের গ্রামে ঘুরছেন আধিকারিকেরা। নিজস্ব চিত্র ফাইল চিত্র।

কারও নিজের নামে সরকারি বাড়ি বরাদ্দ হয়েছিল। কারও আবার স্ত্রী বা নিকটজনের নামে। আবাস-প্লাসের যাচাই পর্বে তৃণমূলের সেই সব নেতা, পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধানরা এখন তালিকা থেকে নাম কাটাতে তৎপর। কারও যুক্তি, যখন তালিকা হয়েছিল তখন কাঁচা বাড়ি থাকলেও এখন তা পাকা হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কারও মুখে আবার মানবিকতার কথা। বলছেন, গরিব মানুষ আগে ঘর পাক।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সংশোধিত তালিকা তৈরির জন্য সমীক্ষা হয়েছিল ২০১৭ সালে। চূড়ান্ত তালিকার আগে এখন চলছে যাচাই পর্ব। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি থেকে ছোট-বড় নেতাদের আবাস প্লাস থেকে নাম কাটানোর প্রবণতা। যদিও এর মধ্যে শাসকদলের লোকজন অন্যায্য ভাবে বাড়ি পেয়ে যাচ্ছেন— এমন অভিযোগ রয়েই গিয়েছে।

নাম কাটানোর এই হিড়িক কেমন? সূত্রের দাবি, মালদহে ৪০ হাজার, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৩৭ হাজার এবং উত্তর দিনাজপুরে ২০ হাজার নাম ইতিমধ্যে বাদ পড়েছে। এর মধ্যে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে শাসক শিবিরের একাধিক নেতার আত্মীয়ের নাম রয়েছে। কোচবিহারেও পাঁচশোর বেশি নাম বাতিলের আবেদন এসেছে, যাদের বেশিরভাগই তৃণমূল সদস্য। এমনই এক জন ধলপল ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি পরিমল দাস। তাঁর স্ত্রী পঞ্চায়েত সদস্য। আবাস প্লাসে নাম ছিল পরিমলের। পরিমলের যুক্তি, ‘‘আমার ঘর আছে। আমি চাই গরিব মানুষ ঘর পাক।’’ জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা মানছেন, “সমীক্ষার সময় হয়তো অনেকের পাকা বাড়ি ছিল না। পরে হয়েছে। তাই অনেকে নাম কাটাতে আবেদন করেছেন।’’

Advertisement

দক্ষিণবঙ্গেও এক ছবি। হুগলির আরামবাগের পাঁচ তৃণমূল নেতা আবাস প্লাস থেকে নিজেদের এবং নিকটজনের নাম বাদের আবেদন করেছেন। ব্লকেরই তৃণমূল যুব সভাপতি অভিজিৎ বিশ্বাস বাবার নাম কাটিয়েছেন। আর নিজের নাম কাটিয়ে আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের প্রধান দিলীপ রায় বলছেন, ‘‘পাকা বাড়ি আছে। মানবিক কারণেই নাম প্রত্যাহার করেছি।’’

তালিকা থেকে স্বেচ্ছায় নাম বাদ দেওয়ার প্রবণতা অবশ্য বীরভূমে অনেকটা কম। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরে শাসকদলের প্রায় ২০০ জন নিজেদের নাম আবাস তালিকা থেকে বাতিল করতে বলেছেন। পুরুলিয়ায় একাধিক প্রধান-উপপ্রধান তো বটেই, নাম বাদের তালিকায় রয়েছেন জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান হংসেশ্বর মাহাতোও। পূর্ব বর্ধমানের রায়না, মেমারি থেকে গলসি, আউশগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় আবার তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের বড় পাকা বাড়ি রয়েছে বলে সরব হন এলাকাবাসীই। সে কথা জানাজানি হতেই অনেকে বাড়ি ফিরিয়েছেন। যুক্তি সেই এক— সমীক্ষার সময় কাঁচা বাড়ি ছিল। এখন পাকা বাড়ি করেছেন।

প্রশ্ন হল, কেন এত দিনেও তাঁরা পাকা বাড়ির কথা প্রশাসনে জানাননি? আর এখানেই সামনে আসছে ভোটের অঙ্ক।

তৃণমূল সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের ভাবমূর্তি বজায়ে বাড়তি সতর্ক দল। সেই মতো জেলায় জেলায় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি মানছেন, ‘‘বৈঠক করে সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে, আবাস যোজনার বাড়ি পেতে কেউ যেন মাতব্বরি না করে।’’ তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি মহুয়া গোপেরও স্বীকারোক্তি, “কোনও তৃণমূল নেতা যদি অসদুপায়ে নিজের বা পরিচিতের কারও নাম তালিকায় তুলে থাকেন, প্রশাসনকে বলেছি তা কেটে দিতে।”

বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি শমিত দাশ অবশ্য বলেন, ‘‘শুধু তালিকা থেকে নাম কাটালে ভাবমূর্তি উদ্ধার হবে না।‌ কাটমানি ফেরত দিতে হবে।’’ সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘এ সব ভোটের আগে চমক দেওয়ার চেষ্টা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement