সুপ্রকাশ গিরি। ফাইল চিত্র।
তিনি এলাকার বাসিন্দা নন। পেশায় কৃষকও নন। তাও কী ভাবে সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান হয়ে গেলেন?
রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির ছেলে তথা কাঁথি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরির বিরুদ্ধে এই প্রশ্ন তুলেই মামলা হয়েছিল হাই কোর্টে। মঙ্গলবার সেই মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। মন্ত্রী-পুত্র সুপ্রকাশ যুব-তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিও বটে। ফলে, তাঁকে কি এই সব সমীকরণে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে? প্রশ্ন উঠেছে আদালতে।
রামনগর-১ ব্লকের দুবলাবাড়ি টেঙড়ামারি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সদস্য সুপ্রকাশ। ওই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নথি জাল করে পূর্বতন সদস্য কৃত্তিবাস মাইতির নাম মুছে সেই জায়গায় সুপ্রকাশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলেঅভিযোগ। এর প্রেক্ষিতে ২৩ নভেম্বর হাই কোর্টে মামলা করেন কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের বাসিন্দা শেখ মোক্তার আলি। ওই সমবায় সমিতি পূর্ব মেদিনীপুরের বলাগেড়িয়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের অধীন। সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানও হয়েছেন সুপ্রকাশ। বেআইনি ভাবে সেই পদ দখলের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।
মামলার শুনানিতে বিচারপতি রাজশেখর মান্থা প্রশ্ন তোলেন, সুপ্রকাশের বিরুদ্ধে কেন এফআইআর হবে না? এরপর এফআইআর করার নির্দেশ দেন তিনি। পুলিশকে তদন্ত করে তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট দিতেও বলেছেন। তদন্তকারীরা চাইলে তথ্য প্রমাণের জন্য চাইলে আরও কাউকে এফআইআরে যুক্ত করতে পারেন, জানিয়েছে আদালত। বিচারপতি আরও জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হবে। খতিয়ে দেখতে হবে সাদা কালি ব্যবহার করে কী ভাবে কারচুপি হয়েছে।
মামলাকারী মোক্তারের বক্তব্য, সমবায় আইন অনুযায়ী সমবায় যে এলাকার সেখানকার বা তার আশপাশের গ্রামের বাসিন্দা হলে তবেই সমবায়ের সদস্য হওয়া যায়। আর কৃষক ছাড়া কেউ কৃষি সমবায়ের সদস্য হতে পারেন না। অথচ সুপ্রকাশ কাঁথি শহরের বাসিন্দা, পেশায় কৃষকও নন। এর আগে এই সমবায় নিয়ে মন্দারমণি উপকূল থানাতেও এফআইআর হয়েছিল। তবে তাতে সুপ্রকাশের নাম ছিল না। মামলাকারীর আইনজীবী অতরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা আগেই সুপ্রকাশ গিরির বিরুদ্ধে নথি জালের বহু প্রমাণ আদালতে দিয়েছি। তাই হাই কোর্টের নির্দেশে পুলিশ সুপ্রকাশের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে বাধ্য।’’
সম্প্রতি কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগে নাম জড়িয়েছে মন্ত্রী-পুত্রের। কাঁথির প্রভাতকুমার কলেজে প্রভাব খাটিয়ে ছাত্র ভর্তির অভিযোগে সুপ্রকাশের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন কাঁথির বাসিন্দাদের একাংশ। যদিও সুপ্রকাশ বলছেন, ‘‘ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। একটি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল বলে শুনেছি। আমার বিরুদ্ধে কিছু হয়েছে বলে জানি না।’’ তবে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি, অসীম মিশ্র বলেন, ‘‘দুর্নীতি আর তৃণমূল সমার্থক। বারবার তা প্রমাণিত হচ্ছে।’’