গোয়ায় তৃণমূলে যোগ দেন লিয়েন্ডার। ছবি— পিটিআই।
কলকাতায় জন্ম, বেড়ে ওঠা। বর্তমানে গোয়ার বাসিন্দা লিয়েন্ডার পেজ। টেনিসের লন ছেড়ে সদ্য যোগ দিয়েছেন রাজনীতিতে। গোয়া সফররত তৃণমূল নেত্রী নিজে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন ঘাসফুল পতাকা। কিন্তু আন্তর্জাতিকখ্যাতি সম্পন্ন টেনিস তারকার রাজনৈতিক লক্ষ্য কী?
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেজ জানিয়েছেন নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা এবং অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে তাঁর মনোভাব। জানিয়েছেন, তিনি বরাবরই চাইতেন দেশের সেবা করতে। খেলা ছাড়ার পর রাজনীতিতে নামার প্রস্তাব আসতে তাই সাগ্রহে রাজি হয়ে যান।
সাক্ষাৎকারে লিয়েন্ডার বলেন, ‘‘৩০ বছর আগে যখন টেনিস খেলা শুরু করেছিলাম, তখন থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল দেশের কাজে নিয়োজিত হওয়া। আজ খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরও সেই লক্ষ্য বদলায়নি।’’ লিয়েন্ডারের কথায়, ‘‘২০১৪-য় বলেছিলাম আমি রাজনীতিতে আসতে ইচ্ছুক। খুব ছোটবেলা থেকেই দেশের সেবা করতে চেয়েছি। এমন কিছু করতে চেয়েছি, যাতে দেশ আমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে। আমার মনে হয়, রাজনীতিতে নামার এটাই ঠিক সময়। কারণ গত ৩০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক আঙিনায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতা আমার আছে।’’
কিন্তু দেশে এত নেতা নেত্রী থাকতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন? তার উত্তরও দিয়েছেন ১৮টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতা তারকা। পেজ বলেন, ‘‘এখন আমার হাতে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করার মতো সময় ও ইচ্ছে, দুই-ই আছে। আর মমতা দিদির সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার আগে একটা সুবিধাজনক জায়গা দরকার ছিল। আমার মনে হয়, মমতা দিদি আমাকে সেই সুযোগ করে দিলেন।’’
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে পেজ বলেন, ‘‘এখন দেশে ধর্ম, গায়ের রঙ ও জাতের নামে ভাগাভাগি করতে রাজনীতিকে হাতিয়ার বানানো হচ্ছে। আমাকে অনেকবার এই একই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।’’ বাঙালি মা ও গোয়ানিজ বাবার সন্তান লিয়েন্ডার অবশ্য নিজের ভারতীয় পরিচয়েই গর্ব বোধ করেন। তাঁর মতে, দেশের সরকারের একমাত্র গুরুত্ব হওয়া উচিত সু-প্রশাসন। কারণ একমাত্র সুস্থ, সবল নাগরিকই সুস্থ, সবল দেশ নির্মাণ করতে পারে।
তিনি কি ভোটে লড়বেন?
এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিলেও আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন, সেই সুযোগ এলে পিছু হঠবেন না। পেজ বলেন, ‘‘আমি দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। আমরা একসঙ্গে বসে আলোচনা করে একসঙ্গেই সিদ্ধান্ত নিই। যদি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেন, নিশ্চয়ই সবাই জানতে পারবেন।’’ পাশাপাশি জানাতে ভোলেননি, গোয়ার মানুষকে সেবা করার সুযোগ পেতে তিনি যথেষ্ট আগ্রহী। গোয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অবশ্য উদ্বেগ ধরা পড়ে পদকজয়ী অলিম্পিয়ানের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘সুন্দরী গোয়ায় এমন একাধিক জিনিসের কথা আমি বলতে পারি, যেগুলো ঠিক হওয়া প্রয়োজন। গোয়ায় পরিশ্রুত জলের অভাব রয়েছে, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অপ্রতুল। এ ছাড়া নিকাশি ও পরিবহণ নিয়ে বড় সমস্যায় ভুগছেন গোয়ার মানুষ। সর্বোপরি আছে বেকারত্বের জ্বালা। এই বিষয়গুলো বদলানো দরকার।’’
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কেও পঞ্চমুখ লিয়েন্ডার। তাঁর মতে মমতা এমন একজন নেত্রী, যিনি প্রতিশ্রুতি দিলে রাখেন। তাঁর কথায়, যা এ যুগে বিরল। মমতা সম্পর্কে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া পেজ বলছেন, ‘‘মমতাদিদি গরিব ও প্রান্তিক মানুষের দুঃখ দুর্দশার প্রতি প্রকৃত অর্থেই সহানুভূতিশীল। তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের সেবা করাই আসল কাজ। সবচেয়ে বড় কথা হল, এ জন্য দিদি কারও অপেক্ষায় বসে থাকেন না। মমতা প্রকৃত অর্থেই কাজের মানুষ।’’ লিয়েন্ডারের কথায়, ‘‘মমতা হলেন এমন একজন মানুষ, তিনি নিজে যেটা ভাবেন, সেটাই করতে সক্ষম।’’