অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের সমর্থনে টুইট করে অমিত শাহকে ‘বাস্তবের পাপ্পু’ বলে আক্রমণ করলেন জহর সরকার। — নিজস্ব চিত্র।
দিন কয়েক আগেই প্রকাশ্যে দলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ। কিছুটা নিন্দাও ছিল তাঁর গলায়। কিন্তু রবিবার একেবারে ভিন্ন সুর জহরের। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের বক্তব্যের সমর্থনে টুইট করে আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। ‘বাস্তবের পাপ্পু’ বলে আক্রমণ করেছেন তিনি। আর তাতেই উঠেছে প্রশ্ন, উল্টো সুর ছেড়ে কি নরম হলেন জহর?
গত সোমবার সংবাদমাধ্যমে জহর দাবি করেন, দলের একটা দিক পচে গিয়েছে। এমন দল নিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করা সম্ভব হবে না। বাড়ির লোকেরা ও বন্ধুবান্ধবেরা তাঁকে রাজনীতি ছাড়তে বলেছেন বলেও দাবি করেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ। বলেন, ‘‘এক সাইড পচা শরীর নিয়ে ২০২৪ সালে লড়াই করা মুশকিল।’’ এখানেই না থেমে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হেফাজতে থাকা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে বলেন, ‘‘পার্থবাবুকে তো শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে দেখেছি। কথাও বলেছি অনেক বার। টিভিতে দেখে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ও রকম ভদ্রলোকের ইমেজ! তিনি কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু দুর্নীতির টাকা দিয়ে তাঁকে অলঙ্কৃত করা। এটা দেখলে কী রকম গা শিরশির করে।’’ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের মোহর লাগিয়ে যত ইচ্ছা টাকা বানাব, বান্ধবীর নামে ফ্ল্যাট বানাব, গাড়ির পরে গাড়ি কিনব, এগুলো মানতে পারছি না।’’ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বাড়ির লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে বলল, তুমি ছেড়ে দাও। বন্ধুরা বলছে, তুই এখনও আছিস? কত পেয়েছিস? এই ধরনের লাঞ্ছনা তো জীবনে কখনওই শুনতে হয়নি।’’
এর পরেই তৃণমূলের পক্ষে একের পর এক নেতা জহরকে আক্রমণ করেন। প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় জহরকে ‘স্বার্থপর’ তকমা দিয়ে বলেন, ‘‘জহর সরকার যে স্বার্থপর এবং স্বার্থকেন্দ্রিক সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এই ধরনের আমলারা এমনই হন। এঁরা উপকার নেন। তার পরে ক্ষতি করার আগে এক বারও ভাবেন না।’’ একই সঙ্গে জহরকে সাংসদ পদ ও সেই বাবদ পাওয়া সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জও জানান সৌগত। রাজ্যসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলের সচেতক তথা জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বুধবার এ বিষয়ে বলেন, ‘‘দায়িত্বশীল মানুষের দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত।’’ এর পরে তৃণমূলও কিছুটা দূরত্ব তৈরি করে জহরের সঙ্গে। তার পরেই রবিবার জহর যে টুইট করেছেন তাতে নরম হওয়ার জল্পনা শুরু হয়েছে।
গত শুক্রবার কলকাতায় ইডির দফতরে দীর্ঘ জেরার শেষে শাহকে আক্রমণ করেছিলেন অভিষেক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ‘পাপ্পু’ বলেন। জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা সনিয়া গাঁধী-তনয় রাহুল গাঁধীকে ‘পাপ্পু’ বলে আক্রমণ করেন বিজেপি নেতারা। সেই খেলাকেই উল্টে এ বার বিজেপির বিরুদ্ধে ব্যবহার করলেন কোনও বিরোধী দলনেতা। তার পরের দিন শনিবারই অভিষেক-অনুগামীরা নতুন এই টি-শার্টটি নিয়ে জোর প্রচার শুরু করেছেন। টি-শার্টটিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখের একটি কার্টুন ছাপা হয়েছে। ঠিক তার নীচেই লেখা হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’জ বিগেস্ট পাপ্পু’। সেই টি-শার্টের ছবি দিয়ে জহরের টুইটে তাই নরম হওয়ার ইঙ্গিতই দেখছেন অনেকে।