সুনসান মৈপিঠ চত্বরে পুলিশের টহল। রবিবার। ছবি: সুমন সাহা
মৈপিঠে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনায় যুব তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি, দুই পঞ্চায়েত সদস্য-সহ দু’পক্ষের ১৩ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
দলীয় কর্মী সুধাংশু জানার মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ, সোমবার কুলতলি বন্ধের ডাক দিয়েছে এসইউসি। রাজ্যজুড়ে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালন করা হবে বলে এসইউসি-র জেলা কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধে থেকে কুলতলির মৈপিঠ বৈকুন্ঠপুর পঞ্চায়েত এলাকায় গোলমাল বাধে এসইউসি-যুব তৃণমূলের। শুক্রবার রাতে যুব তৃণমূল নেতা অশ্বিনী মান্নাকে মারধর করে, কুপিয়ে খুন করা হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, এসইউসির গুন্ডাবাহিনী তাঁকে মেরেছে। শনিবার সকাল থেকে এলাকায় তাণ্ডব শুরু করে কিছু দুষ্কৃতী। এসইউসি-র দাবি, তারা সকলে যুব তৃণমূলের লোকজন। বহু বাড়ি, দোকানে আগুন লাগিয়ে ভাঙচুর করা হয়। পোড়ানো হয় বাইক। নিজের পোড়া বাড়ি থেকেই এসইউসি নেতা সুধাংশু জানার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এসইউসি-র অভিযোগ, তাঁকে পিটিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে মাত্র একটি আসন পেয়েও এই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করেছিল যুব তৃণমূল। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও বিরোধী আসনে বসতে হয়েছিল এসইউসিকে। তারপর থেকেই দু’দলের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। সম্প্রতি পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাব আনার তোড়জোড় করছিল এসইউসি। তাতে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে।
শনিবার রাত পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন যুব তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি পিন্টু প্রধানও। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পিন্টু ছাড়াও যুব তৃণমূলে যোগ দেওয়া দুই পঞ্চায়েত সদস্যও গ্রেফতার হয়েছে। ধৃতদের রবিবার বারুইপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক সকলকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিকেলে জয়নগরে এসইউসি-র জেলা দফতরে সুধাংশুর দেহ পৌঁছয়। দেহ মৈপিঠে নিয়ে যেতে চাওয়া হলেও পুলিশ অনুমতি দেয়নি। জেলা দফতর থেকেই মিছিল করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিষ্ণুপুর শ্মশানে।
এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তরণ নস্কর বলেন, “সুধাংশু জানাকে নৃশংস ভাবে খুনের প্রতিবাদে সোমবার ১২ ঘণ্টা কুলতলি বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে।”
অন্য দিকে, কুলতলি ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি গণেশ মণ্ডল বলেন, “এসইউসি বরাবর খুনের রাজনীতি করে এসেছে। ওদের ডাকা বন্ধে মানুষ সাড়া দেবেন না।” অঞ্চল সভাপতির গ্রেফতার প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “সুধাংশু জানাকে খুনের অভিযোগে পিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু সুধাংশু জানা আত্মহত্যা করেছেন। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
এ দিন এলাকায় যান মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের কর্মীরা। সংগঠনের জেলা কমিটির সম্পাদক আলতাফ আহমেদ বলেন, “খুন, পাল্টা খুনের পুরনো রাজনীতি ফিরে এসেছে কুলতলিতে।’’